ঢাকা, ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

জাপান: ধর্ষণ যখন ধর্ষণ না

মানবজমিন ডেস্ক
৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

জাপানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেগুমি ওকানো। তিনি ধর্ষিত হয়েছেন। জানেন ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, পুলিশের কাছে মামলা দিলে তাতে কিছুই হবে না। অভিযুক্ত বেরিয়ে যাবে। আর বিষয়টিকে জাপান কর্তৃপক্ষও আমলে নেবে বলে মনে হয় না। এ জন্য তিনি এ অভিযোগ নিয়ে পুলিশে যাননি। মেগুমি বলেছেন, আমি যেহেতু এভাবে বিচার পেতে পারি না। তাই ওই নরপিশাচ মুক্তভাবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আমার জন্য এটা বেদনার। কিন্তু সম্ভবত এ বিষয়ে পরিবর্তন আসছে। দেশটির যৌন অপরাধ বিষয়ক আইন সংস্কারের একটি ঐতিহাসিক বিল নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে জাপানের পার্লামেন্টে। এটা হচ্ছে এক শতাব্দীর মধ্যে মাত্র দ্বিতীয়বার রিভিশন। এতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলা হচ্ছে। 

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি দেখার, তা হলো ধর্ষণকে তারা ‘জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক’ থেকে ‘অসম্মতিতে যৌন সম্পর্কের’ মধ্যে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছেন। জাপানের সমাজ ব্যবস্থায় এসব বিষয়ে খুব কমই মানুষের ধারণা আছে। জাপানের বর্তমান আইনে ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে জোরপূর্বক এবং হামলা চালিয়ে অথবা ভীতি প্রদর্শন করে, কোনো ব্যক্তি অচেতন অবস্থায় অথবা বাধা দিতে অক্ষম ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে। 

২০১৪ সালে টোকিওতে একজন পুরুষ ১৫ বছর বয়সী একটি বালিকাকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে তাকে ধর্ষণ করে। ওই বালিকা তাকে বাধাও দিয়েছিল। কিন্তু আদালত ওই ব্যক্তিকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে। কারণ, আদালত বলেছে, ওই ব্যক্তিকে বাধা দিতে চরম পর্যায়ের কঠিন কিছু ছিল না ওই বালিকার জন্য। ওই টিনেজারকে একজন প্রাপ্তবয়স্কা হিসেবে দেখা হয়। কারণ, জাপানে ১৩ বছর বয়সকে প্রাপ্ত বয়স হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বের ধনী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে জাপানেই বয়োঃপ্রাপ্তির বয়স সবচেয়ে কম। যৌন অপরাধের শিকার একটি গ্রুপের নাম স্প্রিং। এর মুখপাত্র ইউ তোদোকোরো বলেছেন, প্রকৃতি বিচার প্রক্রিয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে বিবাদি অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে, এটা প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও তাকে অভিযুক্ত করা হয় না। 

এ কারণেই মেগুমি পুলিশের কাছে যাননি। তাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ধর্ষণ করার পর তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা দু’জন একসঙ্গে টেলিভিশন দেখছিলেন। আস্তে আস্তে ওই ছাত্রটি তার দিকে যৌন সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করে। মেগুমি তাতে সায় দেননি। এরপর ওই ছাত্রটি তার ওপর হামলে পড়ে। কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে মেগুমি শক্তিহীন হয়ে পড়েন। বাধা দেয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ধরনের হামলে পড়া অনেক সময়ই বর্তমান আইনের অধীনে পড়ে না। 

মেগুমি আইনের একজন ছাত্রী। কয়েকদিন পরে তিনি দণ্ডবিধি এবং মামলার বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেন। তারপর দেখলেন যা ঘটেছে তাকে আদালত ‘অবমাননা এবং ভীতি প্রদর্শন’ হিসেবে দেখবে না। এ ছাড়া শোনা যায় এসব ক্ষেত্রে ভিকটিমকে দায়ী করা হয়। তাদেরকে পুলিশ অথবা হাসপাতালের স্টাফরা স্পর্শকাতর তথ্য জিজ্ঞেস করেন। এর মধ্যদিয়ে তাদেরকে মানসিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। ফলে অধিকারকর্মীরা একে দ্বিতীয় ধর্ষণ হিসেবে অভিহিত করেন। 

এসব কারণে মেগুমি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টারে যান। তারা তদন্ত করে। তারা রায় দেয় যে, হামলাকারী ওই ছাত্র ধর্ষণ করেছে। তদন্ত যখন শেষ হয়েছে, ততক্ষণে ধর্ষক ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। তাকে শুধু সতর্কতা দেয়া হয়। এর বাইরে তাকে আর কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। মেগুমি বলেন- আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। কারণ, অপরাধের জন্য এই ব্যক্তিকে আমি যথার্থ অনুশোচনা করাতে পারিনি। মেগুমি একাই নন। জাপানে এমন যতগুলো ঘটনা ঘটে, তার মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশকে বিচারে ধর্ষণ হিসেবে রায় দেয়া হয়। সাধারণ অপরাধ বিষয়ের বিচারের যে হার, এই হার তার চেয়ে কিছুটা কম। ২০১৯ সালে যখন ধারাবাহিকভাবে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তখন জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্ষককে এক মাসের মধ্যে খালাস দেয়া হয়।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status