বিশ্বজমিন
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো বিশ্ব সম্প্রদায়
মানবজমিন ডেস্ক
(২১ ঘন্টা আগে) ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:০১ অপরাহ্ন

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘সম্পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়। কয়েক দিনে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণের মাধ্যমে সংঘর্ষের ফলে অনেক প্রাণহানির পর এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। এই উত্তেজনার সূচনা হয় ২২শে এপ্রিল। তখন ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারতের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। ভারতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের ভেতরে ড্রোন হামলা চালানো হয়। এর ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর জানায়, মোট ২৪টি হামলা করা হয়েছে। তাতে ৩৩ জন পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৭৬ জন আহত হয়েছেন।
এই হামলার জবাবে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতের একটি ব্রিগেড সদরদপ্তরসহ একাধিক চৌকি ধ্বংস করে। শনিবার সকালে ভারত পাকিস্তানের একাধিক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ নামে প্রতিশোধমূলক অভিযানে। এই টানটান উত্তেজনার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বের বহু নেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই যুদ্ধবিরতিকে ‘শান্তির পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিক বলেন, মহাসচিব আশা করেন এই চুক্তি স্থায়ী শান্তির জন্য সহায়ক হবে এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলোর সমাধানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তাকে ফোন করে পাকিস্তানের সংযম ও দায়িত্বশীল মনোভাবের প্রশংসা করেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সব সময় পাশে থাকবে। উভয় নেতা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং পারস্পরিক সমন্বয় চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। আমরা উভয় পক্ষকে আহ্বান জানাই যেন তারা এই বিরতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি ও স্বাস্থ্যকর সংলাপ প্রতিষ্ঠা করে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আদেল আলজুবেইরও এই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমি উভয় পক্ষকে অনুরোধ করছি যেন তারা এই সিদ্ধান্ত টিকিয়ে রাখে উত্তেজনা প্রশমন সবার স্বার্থে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বৃহত্তর সংঘাত এড়াতে সহায়ক হবে। আন্তর্জাতিক মহল এখন নজর রাখছে এই বিরতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এটি কীভাবে ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।