বিশ্বজমিন
পাক-ভারত সংঘাতে কারা এগিয়ে, চীন নাকি পশ্চিমারা?
মানবজমিন ডেস্ক
(২০ ঘন্টা আগে) ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ৯:২৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:১৩ অপরাহ্ন

কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধবিরতির পরও থামেনি উত্তেজনা। চলছে আলোচনা- কে এগিয়ে, চীন না পশ্চিমারা? সাম্প্রতিক সংঘাতে দুই দেশই ব্যবহার করেছে আধুনিক অস্ত্র। পাকিস্তানের অস্ত্রের বেশিরভাগ এসেছে চীন থেকে। আর ভারতের অস্ত্র এসেছে ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, পরমাণবিক শক্তিধর এ দুই দেশের সংঘাতে সমরাস্ত্রের আধুনিকতা নিয়ে এখনই কথা বলতে হবে। কেননা এই সমরাস্ত্রই ভবিষ্যত পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে
সাউথচায়না মর্নিং পোস্টের বিশ্লেষক সিনং হিয়োন চিও তার ‘চায়নিজ উইপনস পাওয়ার পাকিস্তান ইন কাশ্মীর কনফ্লিক্ট, বাট ডাউটস রিমেইন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছেন, গত সপ্তাহের বুধবার পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের বেশ কিছু স্থানে হামলা চালায় ভারত। যেই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে অপারেশন সিঁদুর। ভারতের এই অভিযানের পরই পারমাণবিক শক্তিধর দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। ২২ এপ্রিল ভারত-অধিকৃত পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলার জেরে পাকিস্তানে হামলা চালায় দিল্লি। পেহেলগামের পাহাড়ী মনোরম উপত্যকার ওই হামলায় মোট ২৬ জন নিহত হন। যাদের বেশির ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের না। এরপর গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে নয়াদিল্লি দাবি করে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত। যার জবাবে পাকিস্তানে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তারা। এসব হামলায় ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফাল নামের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারত। এছাড়া দূর এবং মাঝারি পাল্লার এএএসএম হামার নামের ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহারের কথা জানিয়েছে দেশটি। পাকিস্তান দাবি করেছে তারা ভারতের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করেছে। যার মধ্যে রাফাল ছিল তিনটি। যদিও ইসলামাবাদের এই দাবির বিষয়ে কিছুই জানায়নি দিল্লি। তবে সিএনএন জানিয়েছে, ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, কমপক্ষে ভারতের একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পদস্থ দুই কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তান চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
১৯৪৭ সালের পর থেকে কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে ভারত ও পাস্তিান। এরমধ্যে হিমালয় অঞ্চলে দুই দেশের সঙ্গে কিছু অংশের দখলে রয়েছে চীন। শুরু থেকেই কাশ্মীরের দুটি অংশ ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর যেই রেখার মাধ্যমে দুই অংশ বিভক্ত হয়েছে তার নাম লাইন অব কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখা। কাশ্মীরের আঞ্চলিক বিরোধ দিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে একটি প্রধান উত্তেজনার বিষয় হিসেবে রয়েছে। যা উভয় পক্ষের সামরিক দ্বন্দ্বকে আরও উসকে দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রাগারের উন্নয়ন এবং সীমান্তের কাছে অবিরাম গোলাগুলি। পাকিস্তানের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রয়েছে চীনের। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বব্যাপী অস্ত্র স্থানান্তরের তথ্যানুসারে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট অস্ত্র আমদানির ৮১ শতাংশই চীন থেকে করেছে পাকিস্তান। বিপরীতে ভারতও চীনের কাছ থেকে কিছু যুদ্ধাস্ত্র আমদানি করে। তবে দিল্লির অস্ত্রদাতা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফ্রান্স ও রাশিয়া। গত চার বছরে যথাক্রমে এ দুই দেশ থেকে ৩৩ ও ৩৬ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করেছে ভারত। আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ করেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। সুতরাং ভারত-পাকিস্তান সংঘাত মানেই চীন, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের সমরাস্ত্রের লড়াই।
চীনের তৈরি অস্ত্রের মধ্যে পাকিস্তানের কাছে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যুদ্ধবিমান। সর্বশেষ সংঘাতে পাকিস্তানের ব্যবহৃত জে-১০সি এবং জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান চীনের তৈরি। বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পার্লামেন্টে দাবি করেছেন, জে-১০সি বিমান দিয়েই ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। যদি পাকিস্তানের দাবি নিশ্চিতভাবে সত্য হয় তাহলে, আকাশযুদ্ধে চীনা যুদ্ধবিমানের এটিই হবে প্রথম সফলতা। পক্ষান্তরে ফরাসী রাফাল যুদ্ধবিমানের প্রথম ক্ষতি। জে-১০সি ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে পরিচিত। যা দিয়ে আকাশ থেকে আকাশ যুদ্ধে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যায়। চীন ব্যতিত এই সিরিজের যুদ্ধবিমান একমাত্র পাকিস্তানের বিমারুরাই পরিচালনা করতে পারে। ২০২০ সালে চীন থেকে মোট ৩৬টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান আমদানি করার চুক্তি করেছে পাকিস্তান। যা ২৫০ পিএল-১৫ই ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। বর্তমানে বিশেষ ওই যুদ্ধবিমানের ২০টি হাতে পেয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী।
শুক্রবার ভারত দাবি করেছে যে, তারা পাকিস্তানের জেএফ-১৭ সিরিজের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে ভারত কোনো যুদ্ধবিমানই ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়নি। জেএফ-১৭ হলো ৪ জেনারেশনের একটি যুদ্ধবিমান। যেটি পাকিস্তান ও চীন যৌধভাবে তৈরি করেছে। এই যুদ্ধবিমানও পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
এসআইপিআরআই- এর এক জ্যেষ্ঠ গবেষক সিমন ওয়েজম্যান বলেছেন, সংখ্যা এবং অনেক ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিতেও এগিয়ে আছে ভারত। তবে, সীমিত এই সংঘাতের ফলাফল পাকিস্তানের পক্ষে যেতে পারে। কারণ এখানে সংখ্যার গুরুত্ব কম। এছাড়া এখানে ভারতের প্রযুক্তিগত সুবিধার পূর্ণ ব্যবহারের সম্ভাবনাও বেশি থাকে না। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমরা দেখলাম চীনের সমরাস্ত্র পাকিস্তানের হাতে বেশ কার্যকর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চিমা এবং রাশিয়ার অস্ত্রের তুলনায়ও চীনের অস্ত্র বেশ শক্তিশালী। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, গত দুই দশকে চীন সমরাস্ত্র তৈরিতে অনেক অনেক এগিয়ে গেছে। ওয়েজম্যান যোগ করেছেন, যদিও চূড়ান্ত ফলাফল দেয়ার জন্য আরও তথ্যের প্রয়োজন। কেননা চীনের অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে এখনও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এটাই প্রথম, যেখানে চূড়ান্ত যুদ্ধক্ষেত্রে চীনের এসব আধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহারের কথা জানা গেছে।
পাঠকের মতামত
AGAMI DINE CHINESE ASTRO BAZAR AR THAKBEN NA . CHINESE MADE KONO JINISHER KONO GUARANTEE NAI TAR PROMAN EI TIN DINE EE PURO BISWA JENE GACHE .
We don't want war.