শেষের পাতা
ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ, বন্ধ ওয়াগা সীমান্ত
মানবজমিন ডেস্ক
২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন চুক্তি, ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা সাময়িক স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ হামলায় কমপক্ষে ২৬ পর্যটক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের দিকে আঙ্গুল তুলে আগ্রাসী কথাবার্তা বলছে নয়াদিল্লি। তার জবাবে পাকিস্তান আরও কিছু ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। অনলাইন ডন এর আগে জানায়, ভারতের সঙ্গে ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের ‘আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে’ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) কি ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নির্ধারণ করতে বৈঠক আহ্বান করে। এতে সভাপতিত্ব করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। বৈঠকে যোগ দেন সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাতে পহেলগাঁও হামলার পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে আলোচনা করা হয়। একই সঙ্গে ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ করা সহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে অজ্ঞাত অস্ত্রধারীরা পর্যটকদের ওপর হামলা করে। এতে ২৬ জন নিহত হন। ২০০০ সালের পর এটাই সেখানে বেসামরিক জনগণের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ডন লিখেছে, ভারতের বেশ কিছু মিডিয়া আউটলেট হামলাকারীদেরকে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর ফল হিসেবে একতরফা সিদ্ধান্তে ১৯৬০ সালের সিন্ধু ওয়াটার ট্রিটি বা চুক্তি স্থগিত করে ভারত। কিন্তু ওই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক। এর ফলে কয়েক দশকের শত্রুতার অবসান হয়। ডন লিখেছে, বৃহস্পতিবারের এনএসসি’র বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে তারা পহেলগাঁও হামলার বিষয়ে নজর দিয়েছেন। এরপর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পর্যটকদের প্রাণহানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ২৩শে এপ্রিল ভারত যেসব পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে তা পর্যালোচনা করে কমিটি। এরপর ভারতের ওই পদক্ষেপকে একতরফা, অন্যায়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মারাত্মক দায়িত্বহীন এবং আইনি যোগ্যতা বিবর্জিত বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর ফলে পাকিস্তান সবচেয়ে জোরালো যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা হলো ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত। একই সঙ্গে ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছে তারা। জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। ভারত থেকে এই রুট দিয়ে সব ট্রানজিট স্থগিত থাকবে, ব্যতিক্রম ছাড়া। যারা বৈধ অনুমোদন নিয়ে ওই সীমান্ত অতিক্রম করেছেন তাদেরকে আগামী ৩০শে এপ্রিলের মধ্যে ফিরে যেতে ডেডলাইন বেঁধে দেয়া হয়েছে। সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত রাখার ভারতীয় ঘোষণাকে পাকিস্তান জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এই চুক্তিতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আছে। এটা একতরফাভাবে স্থগিত করার কোনো বিধান নেই। এনএসসি বলেছে, পানি হলো পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা দেশের ২৪ কোটি মানুষের প্রাণ। যেকোনো মূল্যে এই অধিকার সুরক্ষিত রাখা হবে। এই নদীর পানি প্রবাহকে বন্ধ করার বা ভিন্ন পথে প্রবাহিত করা এবং ভাটিতে থাকা মানুষদের অধিকার হরণের যেকোনো চেষ্টাকে অ্যাক্ট অব ওয়ার বা যুদ্ধ বলে গণ্য করা হবে। সার্কের অধীনে ভারতের নাগরিকদের সার্ক ভিসা এক্সেমশন স্কিমের (এসভিইএস) সব ভিসা স্থগিত করেছে পাকিস্তান। শিখ ধর্মাবলম্বী বাদে অন্যদের ক্ষেত্রে এই স্থগিতাদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসভিইএসের অধীনে যেসব ভারতীয় বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছেন তাদেরকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুধু শিখরা এর বাইরে থাকবেন। ইসলামাবাদে ভারতের প্রতিরক্ষা, নৌ ও আকাশ বিষয়ক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। তাদেরকে অবিলম্বে পাকিস্তান ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এ জন্য সময় দেয়া হয়েছে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত। এসব উপদেষ্টার যেসব সাপোর্ট স্টাফ আছেন, তাদেরকেও ভারতে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কূটনীতিক এবং স্টাফ সংখ্যা ৩০শে এপ্রিল থেকে ৩০-এ নামিয়ে আনতে হবে। ভারত মালিকানাধীন অথবা ভারত পরিচালনা করে এমন এয়ারলাইন্সের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নির্দেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। আরও জোর দিয়ে বলা হয়েছে, যেকোনো মিসঅ্যাডভেঞ্চারের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তান ও তার সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি সক্ষম এবং প্রস্তুত রয়েছে। আরও বলা হয়, পাকিস্তানের জনগণ শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কখনোই তারা কাউকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, অখণ্ডতা এবং তাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার কাউকে লঙ্ঘন করতে দেবে না।