শেষের পাতা
মধুচন্দ্রিমা থেকে ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে ফিরলেন হিমাংশী
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
স্বামীর কফিনবন্দি দেহের সামনে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী। চোখে একরাশ শূন্যতা। খানিক পরেই নিস্তব্ধতা ভেঙে কফিনবন্দি দেহ আঁকড়ে বিলাপ করে উঠলেন তরুণী। চিৎকার করে অঝোরে কেঁদে কেঁদেই বলতে থাকেন, ‘‘তুমি ভালো থেকো।’’ পরে অবশ্য নিজেকে খানিক সামলে নিয়ে হিমাংশী বলেন, ‘‘ওর মতো হাসি-খুশি মানুষ খুব কম দেখেছি। যেখানে থাকতো মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। আমরা সকলে ওর জন্য গর্বিত।’’
মাত্র সাতদিন আগে ১৬ই এপ্রিল বিয়ে হয়েছিল হিমাংশীর হরিয়ানার বাসিন্দা নৌ-সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট বিনয় নরওয়ালের সঙ্গে। কিন্তু এক সপ্তাহেই বদলে গিয়েছে জীবনটা।
দুজনে মিলে ঠিক করেছিলেন মধুচন্দ্রিমায় ইউরোপ যাবেন। বিয়ের জন্য বিনয় ৪০ দিনের লম্বা ছুটিও নিয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা পাননি তারা। অগত্যা মিনি সুইজারল্যান্ড বলে পরিচিত নৈস্বর্গের দেশ কাশ্মীরের পহেলগাঁওকেই বেছে নিয়েছিলেন।
মধুচন্দ্রিমায় ভালোই কেটেছিল প্রথম দিনটি। তৃতীয় দিনেই ঘটে যায় বীভৎস ঘটনা। পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকায় মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হানার ঘটনায় অন্তত ২৮ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন বিনয় নরওয়ালও। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হিমাংশী বলেন, “আমি স্বামীর সঙ্গে বসে ভেলপুরি খাচ্ছিলাম। একজন এসে আমার স্বামীকে বললো ও মুসলিম কিনা। আমার স্বামী বললো না। তার পরেই গুলি চালিয়ে দিলো।” সদ্য বিবাহিতার সামনে লুটিয়ে পড়ে স্বামীর দেহ। কান্না জড়ানো গলায় হিমাংশী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কখনো ভাবিনি আমাদের এই সফরটা এমন ভাবে শেষ হয়ে যাবে।”
বৈসরণে জঙ্গি হামলার পরপরই একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ছবিতে দেখা যায়, মৃত যুবকের দেহ আগলে বসে রয়েছেন এক তরুণী। পুরো ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি হতবাক। পরে জানা যায়, পড়ে থাকা নিহত ওই যুবক নৌ-সেনা লেফটেন্যান্ট বিনয়।
আসলে কাশ্মীরে অনেক দম্পতিই মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন। তাদের অনেকের জীবন যে হিমাংশীর মতো ছারখার হয়ে যাবে তা কেউ ভাবেনি। তবে মাস দুয়েক আগে বিয়ে হওয়া দম্পতি মিহির ও কোমল সোনির ভাগ্য ভালো। তারা ঘটনাস্থলে থেকেও বেঁচে গিয়েছেন। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে শিউরে উঠছিলেন কোমল সোনি। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমার জন্য পহেলগাঁওকেই পছন্দের তালিকার প্রথমেই রেখেছিলেন নববিবাহিত দম্পতি। কিন্তু ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন তারা। এখনো শিউরে উঠছেন। সারাজীবন তারা এই ঘটনার কথা ভুলতে পারবেন না। কোমল জানান, এখনো তার চোখের সামনে সেই দৃশ্য ভাসছে। আর্তচিৎকার, গুলির আওয়াজ, রক্তে ভেজা দেহ। পহেলগাঁও হামলা থেকে বেঁচে ফেরা এই দম্পতির মধুচন্দ্রিমা যে এমন বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে তা তারা কল্পনা করতে পারেননি।