শেষের পাতা
দেড় মিনিটের মিশন
মুখে মাস্ক পরে ‘ফ্যাসিবাদের প্রতীকে’ আগুন দেয় যুবক
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বর্ষবরণ শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন লাগার ঘটনায় জড়িত যুবককে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তার নাম পরিচয়ও বের করা যায়নি। তবে দেড় মিনিটের মিশনে থাকা ওই যুবকের মুখে মাস্ক ও পরণে কালো টি-শার্ট ছিল। এ ছাড়া তার পায়ে স্যান্ডেল পরা ও চুল পেছনে ঝুঁটি বাঁধা ছিল। চারুকলার দেয়াল টপকে ভোরবেলা আগুন দিয়ে সে পালিয়ে যায়। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ জানান, ওই ব্যক্তি কালো টি-শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কালো স্যান্ডেল পরেছিলেন। তার চুল পেছনে ঝুঁটি বাঁধা ছিল। চারুকলার মাঝখানের গেট টপকে ওই ব্যক্তি ভোর ৪ টা ৪৪ মিনিটের ভেতরে ঢোকেন। একই পথে তিনি ৪টা ৪৬ মিনিটে পালিয়ে যান। তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। প্রক্টর আরও বলেন, ওই ব্যক্তি প্রথমে তরল দাহ্য পদার্থ দিয়েছেন। তারপর পর্দার আড়ালে চলে গেছেন। তারপর ফুটেজে সেখানে অগ্নিশিখা দেখা গেছে। ওই ব্যক্তি যে গেট দিয়ে ঢুকেছে সেই গেট দিয়েই বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে গেছেন বলে জানান প্রক্টর। পুলিশ তখন কী করছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশকে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে দেখা গেছে। তবে তদন্ত কমিটি সব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে পরে জানাবে।
শনিবার ভোরে নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য বানানো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিভ দুটি আগুনে পুড়ে যায়। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি মোটিভটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। আর শান্তির পায়রা মোটিভটি আংশিক পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বলছে, ভোর ৫টা বেজে ৪ মিনিটে তারা আগুন লাগার খবর পান। সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ৫টা ২২ মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল সরজমিন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় সেখানে পুলিশও ছিল। গতকাল চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নববর্ষের শোভাযাত্রা উপলক্ষে বানানো ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফটি কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্য তারা দুঃখপ্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার, চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল প্রাং ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী প্রক্টর এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী।
চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন বলেন, ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটিকেই পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে। ছেলেটি অনেক স্মার্ট, অর্ডিনারি কোনো পিপল মনে হয়নি। মনে হয়েছে কারও অ্যাসাইন করা ছিল। যুবকটি যখন ওয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে তখন কয়েকটি কুকুর বেরিয়ার দেয়, গাছপালার পাশে একটু দাঁড়ায়। কুকুরগুলো শান্ত হলে সে সামনে গিয়ে মোটিফে আগুন ধরিয়ে সামনে গিয়ে একটু অবজার্ভ করে। যখন দেখে আগুন ঠিকমতো ধরেনি, তখন ফিরে এসে আবার আগুন দেয়। এরপর দেয়াল টপকে বেরিয়ে ছবির হাটের দিকে চলে যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে সে ভেতরে প্রবেশের আগে অনেক্ষণ ধরে পরিস্থিতি অবজার্ভ করেছে। ওই সময় প্রক্টরিয়াল টিমের দুইজন নামাজ পড়তে গিয়েছিল। যে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন, তারা পেছনের দিকে সম্ভবত ওয়াশরুমে গিয়েছিল। ওই ফাঁকা সময়টাতেই সে ঢুকে পড়ে আগুন দিয়ে চলে যায়।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, সেই ব্যক্তি কে, তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আপাতদৃষ্টিতে দেখে যেটা মনে হচ্ছে এটা এক্সিডেন্টাল না, কেউ ইনটেনশনালি এটা করছে। এটুকু আমরা নিশ্চিত। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, চারুকলায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব’ পুড়িয়েছে ‘হাসিনার দোসররা’।
পাঠকের মতামত
এতো কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এই কাজ বাইরের কেউ করতে পারে- এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তদন্তের আগেই কাউকে দোষারোপ করাও কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আসলে প্রত্যেকের মনের গহীনে গেঁথে আছে পুরানো ফ্যাসিবাদী ধারনা। বাইরে সুন্দর কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন।