ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বিতর্কের মধ্যে ক্ষমা চাইলেন মুফতি ফয়জুল

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

সিলেটে হেফাজতে ইসলামের পাল্টা কমিটি গঠনের পর মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদীকে নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়। সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। একটি ছবি ভাসতে থাকে নেট দুনিয়ায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট উপহার দিচ্ছেন তিনি। তাকে ঘিরে বর্তমানে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন মুফতি ফয়জুল। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি ক্ষমা চান। বিবৃতিতে মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী নিজেকে ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশের) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খেলাফতে রাব্বানী বাংলাদেশের আমীর হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, ‘২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের মনোনীত মিনার প্রতীকে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দেশবাসী ও জনগণের কাছে শর্তহীনভাবে ক্ষমা চেয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোট (নিবন্ধন নং- ৩২) এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খেলাফতে রাব্বানী বাংলাদেশের আমীর মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী।’ পরে এ নিয়ে কথা বলার সময় তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘তিনি নিজেই এ বিবৃতি পাঠিয়েছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তার এবং তার দলের ভুল ছিল। এই ভুলের জন্য তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।’ মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ওই নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে মিনার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তখনো তাকে নিয়ে সিলেটের আলেম উলামাদের মধ্যে আলোচনা ছিল। তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে বিভিন্ন সময় খবর রটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অটল ছিলেন। আর ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেও ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ২১৮১ ভোট। আর বিজয়ী প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেন পেয়েছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ভোট। সিলেটের আলেম-উলামাদের দাবি; বিতর্কিত ২০২৪ সালের নির্বাচনকে বৈধতা দিতে ‘পেইড এজেন্ট’ হিসেবে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। এবং সেখান থেকে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেছেন। তবে মানবজমিনকে মুফতি ফয়জুল জানিয়েছেন; ‘তার দলের পক্ষ থেকে ওই নির্বাচনে তিনি একক প্রার্থী ছিলেন না। তার দল থেকে মোট ৫০ জন প্রার্থী বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হন। এর মধ্যে সিলেট-৩ আসনে ময়নুল ইসলাম আশরাফ, সিলেট-৪ আসনে মাওলানা কামরুল ইসলাম ও সিলেট-৬ আসনে মুফতি মাসুদ আহমদও প্রার্থী হন। সবার পক্ষ থেকে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’ মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদীর বাড়ি জকিগঞ্জে। তার চাচা জাতীয় মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা ওবায়দুল্লাহ (রহ.)। চাচার সূত্র ধরে আলেম সমাজে তার বিশাল পরিচিতি। এখন তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের যে কমিটিতে রয়েছেন সেই কমিটির সভাপতি মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী। নগরের শাহপরানের সিরাজ নগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সিলেটের আলেম উলামারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- মুফতি ফয়জুল হক সিলেটের আলেম-উলামাদের মূল ধারার কেউ নয়। সিলেটের রাজনীতিতে তিনি ফ্যাক্টরও নয়। প্রায় সময় সুবিধা নিতে তিনি নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ান। আর তার এসব কাণ্ডে বিব্রত হন আলেম সমাজের নেতৃবৃন্দ। যেমন তিনি ২০২৩ সালের ২৪শে নভেম্বর নির্বাচন নিয়ে তুমুল বিতর্কের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখন তিনি শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট উপহার দিয়েছিলেন। এরপর সিলেট ফিরে নির্বাচনে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে তিনি ওই সময় আলেম-উলামাদের নামে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। শুধু তাই নয়, মুফতি ফয়জুল হক তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ফায়দা নিতে তার পিতার নামে ‘শেখ মুজিব কোরআন প্রশিক্ষণ বোর্ড’ গঠন করেন। আর ওই প্রশিক্ষণ বোর্ড দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এর আগে মুফতি ফয়জুল হক ২০১৩ সালে হেফাজতের কমিটি গঠনের সময় সিলেটের আলেম-উলামাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পাল্টা কমিটি গঠন করেছিলেন। তবে, এসব অভিযোগ খণ্ডন করেছেন মুফতি ফয়জুল হক। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে সিলেট মহানগর হেফাজতের প্রথম কমিটিতে শায়খ নাসির উদ্দিনকে সভাপতি ও তাকে সেক্রেটারি করা হয়। এরপর যখন হেফাজতের সুনাম গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন মাওলানা আব্দুল বাছিত বরকতপুরীকে এনে সভাপতি করা হয়। সুতরাং হেফাজতের নেতা হিসেবে তিনি সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত। হেফাজত করার কারণে তিনি ওই সময় সাবেক এমপি মাওলানা শাহিনুর পাশার সঙ্গে কারাবরণ করেছেন। ফয়জুল হক দাবি করেন- ইকরা কোরআন শিক্ষা বোর্ড নামে তার চাচা খতিব উবায়দুল্লাহ’র সময় প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্মীয় সংস্থার কার্যক্রম রয়েছে। ইকরা’র নামে নগরে জমি আছে। ওই জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য তিনি শেখ হাসিনার কাছে সহায়তা চাইতে গিয়েছিলেন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী তাকে ভবন নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা ও শিক্ষাখাতে আরও ১০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে শেখ হাসিনার পতন ঘটায় তিনি আর ওই টাকা পাননি।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status