শেষের পাতা
রেলের জমিতে মন্দির, উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমিতে তৈরি খিলক্ষেত সার্বজনীন দুর্গা মন্দির উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে রেলওয়ে কর্মকর্তা ও বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সরকারি জমিতে তৈরি মন্দির উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ভেকু দিয়ে প্রতিমা গুঁড়িয়ে দেয়া নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে। যার ভিডিও ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে খিলক্ষেতের ওই জায়গায় সার্বজনীন দুর্গোৎসব পালিত হয়ে আসছে। দুর্গা পূজা ছাড়াও সেখানে ছোট্ট একটি অস্থায়ী মন্দিরে নিয়মিত কালী পূজা করা হতো। কিন্তু কখনোই মন্দিরটির পাকা স্থাপনা ছিল না। সম্প্রতি মন্দিরের চারপাশে টিন দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। মূল মন্দিরটি পাকা করার জন্য ইটের গাঁথুনি দেয়া শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার রাতে একদল লোক রেলের জায়গায় তৈরি বলে মন্দিরে ভাঙচুর করতে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয় ও থানা পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ওই রাতে সেখানে যাওয়া ব্যক্তিরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মন্দিরটি ভেঙে ফেলতে মন্দির কমিটিকে সময় বেঁধে দেন। তবে থানা পুলিশ উভয়পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকালে রেল পুলিশ, খিলক্ষেত থানা পুলিশ সদস্যদেরকে সঙ্গে নিয়ে বুলডোজার নিয়ে মন্দির উচ্ছেদে আসেন রেলওয়ের দুই কর্মকর্তা। উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেখানে উপস্থিত শুভ রায় নামে এক স্থানীয় যুবক বলেন, বাংলাদেশের কতো এলাকায় যুগের পর যুগ ধরে রেলের শত শত একর জমি দখল করে বহুতল ভবন তৈরি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাস করছে, সেখানে রেল কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ চালায় না। আর এখানে কোনো নোটিশ ছাড়াই আমাদের এই ছোট্ট মন্দিরটি উচ্ছেদ করা হলো। আমাদের প্রতিমা সরিয়ে নেয়ার মতো সময় দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, রেলের জায়গাতে মন্দির ছিল। এতদিন টিনের বেড়া ছিল। সোমবার মন্দির কর্তৃপক্ষ পাকা দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। এতে উত্তেজনা দেখা দিলে রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার ওই রেলের জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আমরা শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখেছি।
এ বিষয়ে গতকাল উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, ‘বুধবার সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয় আজকের মধ্যেই উচ্ছেদ করতে। সেই নির্দেশেই আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। তবে শুধু মন্দির না রেলের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আশপাশের অনেক দোকান ও স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশ রেলের জমি কেউ দখল করতে পারবে না। যেখানেই দখল হবে বা হচ্ছে আমরা সেখানেই উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি। খিলক্ষেতের ঘটনাটাও সে রকমই। তিনি বলেন, আমাদের এই উচ্ছেদ অভিযান একটা চলমান প্রক্রিয়া। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বুলডেজার দিয়ে প্রতিমা গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই অস্থায়ী মন্দিরের কোনো প্রতিমা ভাঙা হয়নি। প্রতিমাগুলো মন্দির কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছেন।