শেষের পাতা
৫০ কোটি টাকা ঋণের প্রলোভনে ২ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
সহজ শর্তে ও বিনা ডকুমেন্টে বিদেশি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ করিয়ে দেয়ার নামে ২ কোটি ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ ঘটনায় প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সফিকুল ইসলাম ও ড. সিপার আহমেদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্লবী ও বনানী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পশ্চিম আগারগাঁওয়ে পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক এনায়েত হোসেন মান্নান।
তিনি বলেন, ৫ শতাংশ সুদে বিনা ডকুমেন্টে ৫০ কোটি টাকা ফরেন ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারক চক্রের মিথ্যা নাটক ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নুর আমিন শাহ ২ কোটি ৬ লাখ টাকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হন এবং বনানী (ডিএমপি) থানায় একটি মামলা করেন। বাদী মামলায় ২ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করলেও, মামলার তদন্তে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাদীকে ৫ শতাংশ সুদে বিনা ডকুমেন্টে ৫০ কোটি টাকা ফরেন ব্যাংক থেকে লোন করিয়ে দেয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বোকা বানিয়ে ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, বাদী এম এইচ ব্রিক ফিল্ড এবং অটো রাইস মিলের একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে তার সঙ্গে ব্যবসায়ী খন্দকার শাহ্ আলমের পরিচয় হয়। ভুক্তভোগী নুর আমিন শাহ তার ব্যবসা প্রসারের জন্য টাকার সমস্যার কথা আলোচনা করলে, খন্দকার শাহ্ আলম তার পরিচিত আসামি সফিকুল ইসলামকে ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং সহজ শর্তে ৫ শতাংশ সুদে লঙ্কা-বাংলা ও ব্র্যাক ব্যাংকসহ বিদেশি ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা লোন করে দেবেন বলে প্রলোভন দেখান। একপর্যায়ে আসামি বাদীকে ঢাকায় আসতে বলেন। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাদী ও ব্যবসায়ী খন্দকার শাহ্ আলম ঢাকায় এসে আসামিদের সঙ্গে বনানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন। তখন সফিকুল বলেন, তার বস ড. সিপার আহমেদ বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা। আসামি বাদীকে আশ্বস্ত করেন যে, ড. সিপার আহমেদ যেহেতু ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং বহু দেশি-বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, তাই যেকোনো লোন করিয়ে দিতে তার অসুবিধা হবে না। আলোচনার একপর্যায়ে আসামিরা বাদীর সব বিষয় শুনে তাকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন করে দিতে পারবেন বলে জানান। তবে এর জন্য আসামিদের দুই শতাংশ কমিশন অগ্রিম দিতে হবে এবং অন্যান্য খরচ বহন করতে হবে বলে জানানো হয়।
পিবিআই’য়ের এই কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তীতে বনানী থানাধীন মহাখালী আমতলী পর্যটন হোটেলের ক্যান্টিনে বসে বাদীর কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা নেয় এবং বিভিন্ন খরচের কথা বলে ৭ থেকে ৮ ধাপে ১ কোটি ২ লাখ টাকা নেয়। আসামিরা তাদের বিকাশ ও নগদে বিভিন্ন কথা বুঝিয়ে ঋণ ফাইলের কথা বলে ২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে। এ ছাড়াও নগদ ৫-৬টি ধাপে আরও ৭৬ লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়। এভাবে নগদ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারণা করে মোট ২ কোটি ৬ লাখ টাকা আদায় করে নেয় চক্রটি। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আসামি সিপার বেসিক ব্যাংক ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ছিলেন। আসামির দেয়া তথ্যমতে, তার নামে দুদকের ২৬টি মামলা চলমান ও বিচারাধীন রয়েছে।