শেষের পাতা
হজ ব্যবস্থাপনার ত্রুটি চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
হজ ব্যবস্থাপনায় এ বছর ছোটখাটো যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে সেগুলো যেন না হয় তার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেন তিনি। এ ছাড়া চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনা যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় তার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী বছরের হজের জন্য ইতিমধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিমধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০ই জুলাই বাংলাদেশিদের জন্য হজ কোটা ঘোষণা করা হবে। বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস বলেন, এ বছর হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। সবাই প্রশংসা করেছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছে এজন্য সবাইকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। নিবন্ধিত সকল হজযাত্রী হজ পালন করতে পারার যে দৃষ্টান্ত এ বছর সৃষ্টি হয়েছে তা যেন এই মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী নীতিতে পরিণত হয় সে বিষয়ে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। প্রফেসর ইউনূস বলেন, হজযাত্রী ও হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সবাই যেন নির্বিঘ্নে হজ পালন করতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। চলতি বছরের হজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক জানান, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং সৌদি সরকারের নির্দেশনার আলোকে হজ ২০২৬ এর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সফল ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, হজযাত্রীদের সৌদি আরবগামী মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণের মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে। বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন অথবা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালের পরিচালক প্রদত্ত সার্টিফিকেটই গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি আরও জানান, সৌদি টাইমলাইন ও রোডম্যাপ অনুযায়ী হজ কার্যক্রমের ক্যালেন্ডার ও চেকলিস্ট তৈরি করা হয়েছে এবং হজযাত্রী কোটা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সচিব জানান, হজ ২০২৬ এর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে। আগামী ১০ই জুলাই ২০২৬ সালের হজ পালনের বাংলাদেশের কোটা ঘোষণা করা হবে এবং ২১শে অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। আগামী ১লা ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন এবং ৪ঠা জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে ভেন্ডর ও কোটেশন অনুমোদনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর ২০শে মার্চ ২০২৬ থেকে হজযাত্রীদের ভিসা প্রদান শুরু হবে এবং ১৮ই এপ্রিল ২০২৬ থেকে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু হবে। সবশেষে, ২৯শে মে ২০২৬ তারিখে পবিত্র হজের পরীক্ষামূলক কাজ (সেবা যাচাইকরণ) সম্পন্ন করা হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৮৭ হাজার ১০০ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে হজযাত্রীরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছেন এবং অ্যাপটিতে ৩০ হাজার ২৩৪ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। পরপর তিন বছর হাজী নিতে না পারায় ৪১৫টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। হজ এজেন্সিগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সূচক ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে হজযাত্রীদের সন্তুষ্টি, চুক্তি পরিপালন এবং সরকারি নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলো দেখে তাদেরকে এ প্লাস, এ, বি, সি ও ডি ক্যাটাগরিতে রাখা হবে। এ প্লাস ক্যাটাগরি যারা অর্জন করেছে তাদেরকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানানোর নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী বছর যারা হজে যেতে ইচ্ছুক তারা যেন এখন থেকে লাব্বাইক অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের নানা প্রশ্নের জবাব পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। একইসঙ্গে পবিত্র ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকরাও যেন এই অ্যাপ থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পান সেদিকে নজর দিতেও বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসি’র সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তিনি এ সাক্ষাৎ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। সাক্ষাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনের সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলেন।
উল্লেখ্য, সরকারের সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।