শেষের পাতা
ইরান পার্লামেন্টে আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের বিল অনুমোদন
মানবজমিন ডেস্ক
২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতেই তেহরানে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। এ নিয়ে গত ১২ দিন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী। নানা নাটকীয়তার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে কোনো সুরাহা করতে পারেনি ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ইরান আগের চেয়ে এ বিষয়ে আরও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এবার জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ’র সঙ্গে সকল সহযোগিতা স্থগিত করার বিল অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। তবে এই পদক্ষেপ এখনো প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক নীতিতে পরিণত হয়নি। এটা বাস্তবায়নের জন্য ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন প্রয়োজন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুদ্ধ চালিয়ে ইরানকে এ পথ থেকে ফেরানো যাবে না। উল্টো এর ফলে ইরান এ বিষয়ে আরও শক্ত অবস্থান নেয়ার পথে রয়েছে। দেশটির তরফে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলায় তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোর অভূতপূর্ব ক্ষতি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা। পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের ঘালিবাফ বলেছেন, আইএইএ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরুদ্ধে কোনো নিন্দা জানায়নি। তারা তাদের আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিলামে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত থাকবে ইরানের পরমাণু কর্তৃপক্ষের।
তিনি ঘোষণা করেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি এখন আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এর প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ বন্ধ হলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি স্বচ্ছতা হারাবে। পশ্চিমা বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হয়ে পড়বে। আরও নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক উত্তেজনা বাড়তে পারে। এ পর্যন্ত জাতিসংঘ বা আইএইএ এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংসের যে দাবি করা হয়েছে তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ। বলেছে, মার্কিন বিমান হামলায় ওইসব পরমাণু কেন্দ্রগুলোর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়া স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলেছে, হামলার আগেই প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়েছে ইরান। যা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। তাহলে কি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটছে ইরান। এ নিয়ে চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা। এর মধ্যে আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করলে বিষয়টি ভিন্নদিকে মোড় নেবে। এতে পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়বে যা সামনে ভয়াবহ কিছুরই ইঙ্গিত বহন করছে। এদিকে অনেকেই মনে করেন ইরানের এখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা উচিত। মার্কিন রাজনৈতিক ভাষ্যকার জ্যাকসন হিনকেল তার এক্সের পোস্টে বলেন, বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরানের উচিত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, ইরান যে প্রায় ৪০০ কেজি (৮৮০ পাউন্ড) ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করেছে, তার অবস্থান সম্পর্কে সংস্থার কাছে কোনো তথ্য নেই। গ্রোসি জানান, ইরানি কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, তারা কিছু ‘সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছেন। এর মধ্যে এই ইউরেনিয়াম স্থানান্তরের বিষয়টিও থাকতে পারে কিংবা নাও থাকতে পারে। তিনি বলেন, এখানে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। এই ইউরেনিয়াম এখন কোথায়? এর জবাব খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে- যত দ্রুত সম্ভব পরিদর্শন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা। আমি মনে করি, এটি সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। গ্রোসি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যে বিমান হামলা চালিয়েছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ মাত্রার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে নাতানজ ও ইস্ফাহানে। এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন ইরানের রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের অনেকে দেশটির সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছেন পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে। তাদের বক্তব্য, আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা সত্ত্বেও ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়নি। আর মার্কিন ও ইসরাইলি মিডিয়াগুলোতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করা হচ্ছে যে, এই দুই দেশের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারেনি। কয়েক মাস পিছিয়েছে মাত্র।
পাঠকের মতামত
মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, মার্কিন, ঈজ্রাইল গোয়েন্দা বিভাগ এই রিউমারটাই ছড়াচ্ছে। যাতে পুরা ইরানী জাতিকে বোমা মেরে পুরা নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে।