শেষের পাতা
মোরালিটি ভেঙে যাওয়ার কারণে পুলিশ মিথ্যা মামলা নিচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জুন ২০২৫, শুক্রবার
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, পুলিশের মোরালিটি ভেঙে যাওয়ার কারণে তারা মিথ্যা মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ মামলা নেবে না, এমন কথা বলার সাহস না থাকায় বহু মিথ্যা মামলা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও আইন বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এই সভায় সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ও জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আইসিটি আইনের অধীনে করা অধিকাংশ মামলাই আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেসব মামলার চার্জশিট হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় সেসব মামলা প্রত্যাহার করতে পারে। তবে পুলিশ সম্পর্কিত বিষয়ে আমাদের সাংবিধানিকভাবে কিছু করার নেই। সভায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মামলার প্রসঙ্গ উঠলে ড. আসিফ নজরুল জানান, নতুন সাইবার প্রোটেকশন আইনের ‘রহিতকরণ ধারা’ অনুসারে, পূর্ববর্তী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে দায়ের করা মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
গণমাধ্যমের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। ডেইলি স্টার তাকে হিরো বানিয়েছিল। তিনি লেকচারার ছিলেন অথচ ডেইলি স্টার তাকে ‘প্রফেসর’ বানিয়ে উপস্থাপন করেছে। প্রথম আলো সুযোগ পেলেই জাফরউল্লাহ চৌধুরীকে বিএনপিপন্থি বলে উল্লেখ করে লিখে, অথচ আনিসুজ্জামান বা জাফর ইকবালকে কখনো আওয়ামীপন্থি বলা হয় না। এভাবে গণমাধ্যম কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ করলে জনগণ গণমাধ্যমগুলোকে সম্মান দেয় না। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ছাড়া কারও কোড অব কন্ডাক্ট নেই।
তিনি আরও বলেন, একশ্রেণির মানুষ মামলা করাকে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে দেখে। আইনজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসব কাজে জড়িয়ে পড়লে সমস্যা আরও জটিল হয়। তবে পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন আইন নেই যে কেউ মামলা করতে পারবে না। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য মিথ্যাচার করা হয়েছে, কিন্তু আমরা কেউই কোনো মামলা করিনি। অথচ সাংবাদিকদের মধ্যেই বিভক্তি রয়েছে, প্রায় প্রতিটি জায়গায় দু’টি করে কমিটি। এভাবে চললে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, সাংবাদিকদের জামিন প্রদান বা প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় কোনো হস্তক্ষেপ করছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের দুর্বলতা থাকলেও তা একটি সেবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি যাদের অবৈধ তদবির রাখি না, তারাই আমাকে ভারতীয় দালাল আখ্যা দেয়। এমনকি ৪০ বছর আগের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুঁড়ে বের করার অপচেষ্টা করে। তবুও আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি, মামলা করাও তো দূরের কথা।
আলোচনায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কেন একজন মালিক অনেকগুলো হাউজের মালিক হন? মালিক না হলে কী সুবিধা অসুবিধা এগুলো নিয়ে আমরা খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারি না, আলোচনাগুলো হয় সুশীলভাবে। মিডিয়াগুলো আটকে যায় মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। আমাদের পত্রিকা ও টেলিভিশন সেক্টরে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট খুবি শক্তিশালী। শুধু বললাম মালিক হতে পারবে না এটা হলে চলবে না। বিপ্লব ছাড়া এগুলো সংস্কার হবে না। সেসব এসোসিয়েশন গণমাধ্যমের দেখভাল করেন তারা সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। বেশির ভাগ সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকদের মৌলিক সমস্যা বুঝেন না।
আলোকচিত্রী ড. শহীদুল আলম বলেন, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে। এ সকল মামলা থেকে কয়েকজন খালাস পেয়েছেন, কোনো কোনো মামলা এখনো শুনানি চলমান রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে যে মামলা করা হয়েছে সেটি এখনো চলমান রয়েছে। আদালতে গিয়ে একাধিকবার জানিয়েছি, সংবিধান অনুযায়ী এ মামলা খারিজ হওয়ার কথা। আলাদা তদবির করে মামলা খারিজ করতে আমি চাই না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা অনেক আশাবাদী কিন্তু যে কাজগুলো হাসিনার আমলে হয়েছে সেগুলো যদি এখনো চলমান থাকে তাহলে সেটি দুঃখজনক।
সিজিএসে’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জি-নাইনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমুখ অংশ নেন।