ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে কেন এই অস্থিরতা!

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার
mzamin

সিলেট অস্থির। জনপ্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসন এককভাবে পরিস্থিতি কন্ট্রোল করতে পারছে না। নানা দিকে সংকট লেগেই আছে। আজ থেকে সিলেটে বন্ধ হচ্ছে গাড়ির চাকা। পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘটে অনড়। গতকাল বিকাল পর্যন্ত  তাদের সঙ্গে কেউ আলোচনায় এগিয়ে আসেনি। পাথরকেন্দ্রিক বৈধ পাথর ব্যবসা বন্ধ। অভিযানে ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর থেকে শুরু হয়েছে ক্রাশার চুরির ঘটনা। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। জাফলং সহ কয়েকটি এলাকায় কোটি কোটি টাকার বালু লুট নিয়ে তীব্র অস্থিরতা বিরাজ করছে। সংঘাতের আশঙ্কা থাকলেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি- সংকটের মূলে  জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ নিজেই। এ কারণে তার অপসারণের দাবিও তারা জোরালো ভাবে উত্থাপন করছেন। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক খেলাও শুরু হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। জেলা প্রশাসকের বৈঠক বর্জন করে সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ করেন জেলা পরিবহন শ্রমিকরা। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসককে অপসারণ সহ ৬ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম। তার দেয়া দু’দিনের আল্টিমেটামে একাত্মতা পোষণ করেছিলেন আরিফুল হক। ওই সমাবেশে ডিসিকে নানা হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য রাখেন আরিফ। এরপর থেকে তিনি অবশ্য নিশ্চুপ। জানিয়েছেন- পরিবহন শ্রমিকদের কর্মসূচিতে তার একাত্মতা রয়েছে। তবে সেটি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে এই কর্মসূচির আওতায় শনিবার থেকে সিলেটে পণ্য পরিবহনের শ্রমিকরা ধর্মঘটে রয়েছে। তাদের এই কর্মসূচিতে একাত্ম প্রকাশ করে গতকাল থেকে ধর্মঘটে জেলা পরিবহন শ্রমিকরা। সিলেট পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জানিয়েছেন- তাদের ধর্মঘট চলমান রয়েছে। দাবি মেনে নিলে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন। নতুবা তাদের আন্দোলন চলছে। এই অবস্থায় পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিকে ভেবে-চিন্তে করার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের জামায়াত নেতা ও পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান আহমদ। এ ব্যাপারে তিনি সাবেক মেয়রের সঙ্গে পুনরায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনারও আহ্বান জানান। এদিকে সিলেটে কয়েকশ’ পাথর মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এই অভিযান চলমান থাকবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তার মতে; সিলেটে স্টোন ক্রাশার মিলের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। যেটি নেয়া হয়েছে সেটি ছিল স্টোন ওয়াশিং মিলের অনুমতি। ফলে পাথর ভাঙার কোনো অনুমতি না থাকায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন-  সিলেটে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই। পাথরকেন্দ্রিক শিল্প এখনো বেঁচে আছে। সেটি নিয়ে নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে। ঢাকার এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা সিলেটের পাথর ব্যবসাকে কুক্ষিগত করতে প্রশাসনকে ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। তারা বলেন- স্টোন ক্রাশার মিল নিয়ে জেলা প্রশাসক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। তিনি ক্রাশার মিলের অনুমতির ব্যবস্থা করতে পারতেন। সেটি সমঝোতার মাধ্যমেই করা সম্ভব। কিন্তু সেটি তিনি না করে জোরপূর্বক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াও  কোথাও কোথাও ক্রাশার মিল গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। ধোপাগুল ও  ভোলাগঞ্জের ক্রাশার মিল মালিক সংগঠনের নেতারা জানান, কয়েক হাজার মিল সিলেটে। ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে এলসি’র মাধ্যমে নিয়ে আসা পাথর ভেঙে বিক্রি করেন। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ কোয়ারি থেকে চুরি করা পাথর ক্রয় করে বিক্রি করে থাকেন। এখন পাথর চুরি বন্ধ করতে পেরে ব্যবসায়ীদের উপর আঘাত করা হচ্ছে। এ কারণে চলমান ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতির সঙ্গে তাদেরও একাত্মতা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গোয়াইনঘাটের একটি ঘটনায় তুমুল ভাবে বিতর্কিত হয়েছে প্রশাসন। ছাত্র সমন্বয়ক দাবিদার আজমল হোসেন নামের এক যুবক রোববার এক ভিডিও বার্তায় প্রকাশ্যে প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি গোয়াইনঘাটের বালু ও পাথর লুটে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন। এর আগে অবশ্য ইউএনও’র নেতৃত্বে পিয়াইন নদীতে আটকে রাখা ভলগেট অভিযান চালিয়ে ছাড়িয়ে নেয়া হয়। এ সময় লেঙ্গুরা গ্রামবাসীর ওপর নির্যাতন করারও অভিযোগ করেন আজমল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- গোয়াইনঘাটের জাফলং, বাংলাবাজার, হাজীপুর সহ কয়েকটি এলাকায় লিজ বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু লুট করা হচ্ছিলো। আর গোয়াইনঘাট সদরে অফিস বসিয়ে সারি-১ নামের একটি বালুমহালের কাগজ দিয়ে র‌্যয়েলিটি আদায় করা হচ্ছিলো। জৈন্তাপুরের বালুমহালের কাগজ দিয়ে গোয়াইনঘাট সদরে টাকা গ্রহণের বিষয়টি মেনে নেননি ছাত্র সমন্বয়ক আজমল। এক পর্যায়ে তিনি ওই ঘাটের ৫০ ভাগ অংশ দাবি করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এক সপ্তাহ ধরে নদীতে কয়েকশ’ ভলগেট আটকে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ভলগেট শ্রমিকরা প্রতিবাদী হলে প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের মুক্ত করা হয়। ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ৬ জনকে আটক করা হয়। তবে প্রশাসনের এই অভিযানের বিপরীতে অবস্থান রয়েছে ছাত্র সমন্বয়ক আজমলের। বালু লুটের ঘটনায় প্রশাসন জড়িত থাকার অভিযোগ এনে গতকাল তার তরফ থেকে গোয়াইনঘাটে মানববন্ধন করা হয়েছে। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status