শেষের পাতা
ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ফেনী শহর
ফেনী প্রতিনিধি
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার
ফেনীতে দু’দিন ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর পানি সন্ধ্যা ছয়টায় বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে প্রবল পানির তোড়ে সিলোনিয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম গদানগর এলাকায় বেড়িবাঁধের অন্তত ১০ মিটার ভেঙে গেছে। মুহুরী নদীর পাড় ভেঙে ফুলগাজীর শ্রীপুর এলাকার দুটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মুহুরী নদীর পরশুরাম উপজেলার বল্লামুখা বেড়িবাঁধের সংস্কারকৃত অংশ নতুনভাবে ভেঙে প্লাবিত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় নদীতে পানি বিপদসীমার ১১৩ মিটার উপরে প্রবাহিত হযেছে। ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর রোড এলাকায় মুহুরী নদীর পাড় সংলগ্ন সড়ক ভেঙে দুইটি দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফুলগাজী-রাজেষপুর আঞ্চলিক সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় চলাচলের অনুপযোগী হওয়াতে মঙ্গলবার সকাল থেকে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উজানে ভারী বৃষ্টি হলে নদীর পানি বাড়বে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। টানা ভারি বর্ষণে ফেনী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, একাডেমী, রামপুর, পাঠানবাড়ি, মিজান রোড, নাজির রোড, কলেজ রোড, হাসপাতাল মোড়, শাহীন একাডেমি, স্টেশান রোড, ডাক্তার পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে চরম জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব সড়কের কোথাও হাটু, কোথাও কোমর পরিমাণ পানিতে ডুবে ছিলো।
শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে চলাচলরত যাত্রী আতিয়ার হাওলাদার বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত ড্রেন ও নালা পরিষ্কার না করায় এই সড়কের ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ফাঁড়ির সামনে কোমর পরিমাণ পানিতে তলিয়েছিল। দিনভর অফিসগামী কর্মজীবী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলাচলে দুর্ভোগে পড়ে। শহরের রামপুর এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাত রুবেল বলেন, টানা বর্ষণে রামপুর এলাকা হাটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে বাসিন্দারা। শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
ফুলগাজীতে মুহুরী নদী সংলগ্ন দুটি দোকান ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হোসেন জানান, সোমবার রাত থেকে অতিবৃষ্টিতে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে মুহুরী নদী সংলগ্ন শহরের সড়কের পাশে দুটি দোকান ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফুলগাজী-রাজেষপুর আঞ্চলিক সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে ওই স্থান দিয়ে ২০২৩ সালে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে বাঁধের নিচে গভীর গর্ত তৈরি হয়। এতে তৎকালীন সময়ে একইস্থানে তিনটি দোকান নদীতে পড়ে যায়। ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীতে পানি বেড়ে বাঁধ ভাঙার তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বন্যার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত বৃষ্টি ও নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিগত ২০২৪ সালে আগস্ট মাসের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ওই সময়ে জেলার ছয় উপজেলায় ২৯ জনের প্রাণহানি হয়েছিলো। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। ভয়াবহ এই বন্যায় সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় সবখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জেলা প্রশাসনের সরকারি হিসাবে বন্যায় প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছিল।