ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

৩ শূন্যের মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার
২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন   
আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি। গতকাল দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান শেখ মোহাম্মদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমি আমার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে মনোনীত করবো। চলমান সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালীভাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আস্থা প্রকাশ করেন শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি। তিনি প্রফেসর ইউনূসকে বলেন, আমরা আপনার অব্যাহত নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখি। প্রধান উপদেষ্টা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতে কাতারের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করেন। এর  মধ্যে রয়েছে- দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করা। প্রফেসর ইউনূস কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমাদের তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়তে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন। শেখ মোহাম্মদ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কাতারে একটি কারিগরি দল পাঠানোর আহ্বান জানান। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা জনগণ যাতে মর্যাদার সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সকল সহায়তার আহ্বান জানান। আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করার জন্য কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান প্রফেসর ইউনূস। দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। শেখ মোহাম্মদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো করার আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি এবং সমস্যার টেকসই সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। দুই নেতা গাজার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। ড. ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করেন যে, গাজার দুর্দশার বিষয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ অংশ এখনো নীরব। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গাজা সংকট কভার করার জন্য কাতার ভিত্তিক সমপ্রচার মাধ্যম আল জাজিরাকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা। প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কাতারের সহায়তা কামনা করেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। শেখ মোহাম্মদ এই অনুরোধ সানন্দে গ্রহণ করেন। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তিন-শূন্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বললেন প্রফেসর ইউনূস: এদিকে তরুণ প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম অভিহিত করে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরকে কল্পনা করতে, বড় স্বপ্ন দেখতে এবং নিজেদেরকে ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমি যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাই, তখন খুবই স্বস্তিবোধ করি। আমি নিজেকে তরতাজা অনুভব করি। তোমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। আমি আন্তরিকভাবে তা বিশ্বাস করি। তোমরাই সুপারম্যান আর সুপারওম্যান। গতকাল কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ শিরোনামে এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, এমন কিছু করো না যা ধনসম্পদের কেন্দ্রীকরণে অবদান রাখে। বরং কল্পনা করো এবং স্বপ্ন দেখো এমন একটি নতুন পৃথিবী গড়ার, যেখানে আত্মবিধ্বংসী পদ্ধতির কোনো স্থান নেই। অনুষ্ঠানের শুরুতে ড. ইউনূসকে বিশ্বমানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। নোবেল বিজয়ী ও ‘ব্যাংকার টু দ্য পুওর’ বইয়ের লেখক প্রফেসর ইউনূস তার বক্তব্যে একটি উদীয়মান নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেন, যা মানবজাতি এবং পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই স্বপ্ন দেখতে হবে, কল্পনা করতে হবে। তিনি বলেন, যদি তুমি কল্পনা করো, সেটা তোমাকে সাহায্য করবে। কল্পনাকে অবহেলা করো না। প্রফেসর ইউনূস তার ‘তিন শূন্য’ ভাবনার কথা তুলে ধরেন- শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে এই প্রজন্ম আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশের রক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। 

খ্যাতনামা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার একান্ত বৈঠক: এদিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতে বিনিয়োগের জন্য কাতারসহ বিশ্বের খ্যাতনামা শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার দোহায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে মালদ্বীপের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের এক সদস্য, মালয়েশিয়ার এক সাবেক মন্ত্রী, কাতারের রাজপরিবারের এক সদস্য, একাধিক শীর্ষ ব্যাংকার এবং কয়েকজন ধনী প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র  হিসেবে রূপান্তর করা। সে জন্য আমরা সব ধরনের বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। আমরা বিশ্বের অন্যতম উৎপাদনকারী দেশ হতে চাই। প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, আমাদের সরকার এ অঞ্চলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করছে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা উৎপাদন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, ব্যাংকিং এবং পর্যটনসহ বিশেষ করে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের রিসোর্ট জোনে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভবনা অন্বেষণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। এ সময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status