বিশ্বজমিন
তালেবান শাসনের এক বছরে কি পেল আফগানিস্তান!
মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) ১৬ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:৪৩ অপরাহ্ন

তালেবানদের ক্ষমতা দখলের এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ে পশ্চিমারা তাদেরকে স্বীকৃতি না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য চীন ও রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কাবুল। এরই মধ্যে কাবুলে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে যুকরাষ্ট্র। এর ফলে তালেবান ও পশ্চিমাদের মধ্যে অবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। তালেবানরা কূটনৈতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দখলদারিত্বের ২০ বছর পরে গত বছর ১৫ই আগস্ট তালেবানরা ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তার প্রথম বার্ষিকী ছিল গতকাল সোমবার। কিন্তু তালেবান শাসকদের সামনে এখনও অনেক কিছু পড়ে আছে। তারা দেশের প্রাণহীন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে। ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সমাধান করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ফলে এ লড়াইয়ে কোনো সহায় হচ্ছে না। বার বার আপিল ও প্রচেষ্টা জানানো সত্ত্বেও ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের কোনো দেশ।
পশ্চিমাদের দাবি, নারী অধিকারের বিষয়ে শিথিলতা দেখাতে হবে তালেবানদের। সরকার হতে হবে অধিক প্রতিনিধিত্বশীল। কিন্তু তালেবানদের অভিযোগ তাদের সরকারকে স্বীকৃতি না দিয়ে ২০২০ দোহা চুক্তি লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে গত মাসে কাবুলে হত্যা করা হয় জাওয়াহিরিকে। এরপর থেকেই পশ্চিমা সরকারগুলো তালেবানদের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। তারা বলছে, দোহা চুক্তিতে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তালেবানরা আল কায়েদা ও সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে দেশে নিরাপদে অবস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসা প্রোভিন্স (আইএসকেপি) বেশ কিছু ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে জাওয়াহিরিকে হত্যা করার পর তালেবানদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা রাখা খুবই কঠিন হবে। তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে জোরালো সমর্থন বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পশ্চিমারা অবস্থান দৃঢ় করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এম্বাসেডর এট লার্জ এবং সন্ত্রাস বিরোধী সমন্বয়ক নাথান সেলস বলেন, জাওয়াহিরিকে হত্যার পর ঝুঁকি রয়েই গেছে। তা হলো তালেবানদের কাছে অর্থ ছাড় দেয়া হলে অপরিহার্যভাবে তা সরাসরি চলে যাবে আল কায়েদার পকেটে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহিম বাহিস বলেন, যদিও পশ্চিমা ও আফগানদের মধ্যে যোগাযোগ খুব নিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে জাওয়াহিরিকে হত্যার মধ্য দিয়ে, তবু এই ঘটনা আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলতে তা পরিষ্কার নয়। আঞ্চলিক অনেক দেশের জন্যই আল কায়েদা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তালেবান সরকারের দিকে পশ্চিমা নয়, এমন দেশগুলো কিভাবে অগ্রসর হয়েছে তা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। চীন, পাকিস্তান ইরান সহ আফগানিস্তানের কিছু প্রতিবেশী দেশ তালেবানের কূটনীতিকদের মেনে নিয়েছে। এ তালিকায় আরও আছে মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, রাশিয়া ও তুর্কমেনিস্তান। প্রকৃতপক্ষে আশগাবাট, বেইজিং, ইসলামাবাদ এবং মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানদের নিয়োগ করা কূটনীতিকদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
তেহরানের সঙ্গে সতর্ক যোগাযোগ আছে কাবুলের। সরকারে হাজারা শিয়া সম্প্রদায়কে বাদ রাখায় অভিভূত হতে পারেনি ইরান। ২০২১ সালের আগস্ট থেকেই তালেবানদের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষ ও পানির অধিকার নিয়ে বিরোধ চলছে ইরানের। ১৯৯০ এর দশকে তালেবান সরকারকে যে তিনটি দেশের সরকার স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে তালেবানের দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তান অন্যতম। কিন্তু আফগানিস্তানকে দখল পরবর্তীতে তাদের বড় সমস্যা দেখা দেয়। তালেবান শাসকরা পাকিস্তানি তালেবানদের উৎসাহিত করেছে, যারা টিটিপি হিসেবে পরিচিত। তারা আন্তঃসীমান্ত হামলায় জড়িত।
গত বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে তালেবানরা একের পর এক কুখ্যাত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারা নারী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনকার মতোই পরিস্থিতি। মানবাধিকার পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি ঘটেছে। ফলে পশ্চিমা সরকারগুলো তালেবানদের স্বীকৃতি দেয়া বা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সুযোগ কমে আসছে। তার পরও তারা বিশ্বাস করে সময় তাদের পক্ষে এবং তাদের শাসন যেমনই হোক পশ্চিমা এবং বাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া। আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো জাভিদ আহমেদ বলেন, তালেবানরা মূলত তাদের তালেবানি অধিকারের পক্ষে। তারা মানবাধিকারের পক্ষে নয়। প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা মনে করে বিশ্বই তাদের সামনে নত হবে।