ঢাকা, ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

কাশ্মীরিদের ছিল দুঃস্বপ্ন

মানবজমিন ডেস্ক

(৭ ঘন্টা আগে) ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৩৭ অপরাহ্ন

mzamin

কয়েকদিনের ভয়াবহ যুদ্ধ। ড্রোনের শব্দ। যুদ্ধবিমান উড়ছে আকাশে। সীমান্তে গোলাগুলি। প্রাণহানি হচ্ছে। এসব দেশে দেখে ভীত, আতঙ্কিত ছিলেন কাশ্মীরের মানুষ। নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশেই আতঙ্ক। একদিকে ভারতের আক্রমণ। অন্যদিকে পাকিস্তানের পাল্টা আক্রমণ। এর মাঝে ভয়াবহ এক ঝুঁকির মধ্যে এসব অঞ্চলে বসবাস করেছে মানুষ। বিশেষ করে উরি এলাকায় গোলাগুলি হয়েছে বেশি। অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু যাদের সেই সক্ষমতা নেই, যাওয়ার জায়গা নেই- তারা থেকে গিয়েছিলেন সেখানেই। তাদেরই একজন ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধা হাজেরা। ঝেলম নদীর ধারে ঘনবসতিপূর্ণ ফাতে কদাল এলাকায় শনিবার সকালে একটি বাদামি সুতির ওড়না গায়ে জড়িয়ে সরকারি খাদ্যগুদামের মেঝেতে বসেছিলেন। মুখে দুশ্চিন্তার রেখা, ঠোঁটের ওপর ঘাম। তার চোখে-মুখে শুধুই আতঙ্ক তখন।

তিনি খাদ্যগুদামের কর্মচারীর দিকে তাকিয়ে দ্রুত করার তাগিদ দিলেন। প্রতিমাসেই তাঁকে এই কেন্দ্রে যেয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ছিল একেবারে ভিন্ন। তিনি বলেন, আমাকে লাইনেই দাঁড় করিয়ে রাখল। পায়ের ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। আমি শুধু চালটা চাই, যাতে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে পারি। যুদ্ধ চলছে। ৮ই মে উরির এক গ্রামে গাড়িতে করে পালাতে গিয়ে শত্রুপক্ষের শেলের আঘাতে মারা যান নারগিস বশির নামের এক নারী। আহত হন তার পরিবারের আরও তিনজন। একই দিন গভীর রাতে উরির মোহরা গ্রামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বোফর্স কামান গর্জে উঠলে ২৮ বছর বয়সী সুলেমান শেখের বাড়ি কেঁপে ওঠে। 

সুলেমান বলেন, দাদু বলতেন, এই কামান ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় শেষবার গর্জেছিল। এবারও সেই আওয়াজ শুনে বুঝলাম, পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর কয়েক ঘণ্টা পর শত্রুপক্ষের একটি শেল তার বাড়িতে আঘাত হানে এবং পুরো ঘর ভেঙে পড়ে। শ্রীনগরে ব্যবসায়ী হাসনাইন শাবির বলেন, যুদ্ধ যদি এমন হয়, তাহলে আসল যুদ্ধ কেমন হবে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

অনেক বাসিন্দা যুদ্ধবিরতির পরও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে রাজি নন। তাদের একজন সাবেক সেনা সদস্য মুহাম্মদ নাসির খান। তিনি বলেন,  আমার মেয়েরা ফিরতে চাইছে না। ছাত্র মুনীব মেহরাজ বলেন, আমরা ক্লান্ত, এই অনিশ্চয়তা আর সহ্য হয় না। আমাদের দরকার স্থায়ী সমাধান, সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয়। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ফুরকান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা তো কেবল দুই দেশের যুদ্ধের ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’। 

দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ যুদ্ধ করল, প্রাণ গেল আমাদের, ঘর ভাঙল আমাদের, তবুও কারও কাছে আমাদের কথা গুরুত্ব পায় না। যদিও সাময়িক যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি এনেছে, কিন্তু কাশ্মীরের মানুষ জানে- এটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এই দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি অবশ্যম্ভাবী। একজন তরুণ বলেন, প্রতিবারই কাশ্মীরই বেশি ভোগে। এই মুহূর্তে কাশ্মীরিদের একটাই প্রশ্ন: আর কতদিন চলবে এই ধারা?
 

পাঠকের মতামত

যুদ্ধ হল কিছু মানুষের জন্য ফুর্তির বিষয়। যুগের পর যুগ ধরে এসবই চলছে। কে থামাবে। সবচেয়ে ভালো বানিজ্য বটে।

Anwarul Azam
১২ মে ২০২৫, সোমবার, ১:২৫ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status