খেলা
মিরাজ ‘ম্যাজিক’
স্পোর্টস রিপোর্টার
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
সাকিব আল হাসানের বিকল্প হবেন মেহেদী হাসান মিরাজ! ক্রিকেট বোদ্ধাদের এমন মন্তব্য একটু দেরিতে হলেও প্রমাণ করতে শুরু করেছেন এই অলরাউন্ডার। গতকাল চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়ামে সাকিবকে এক রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেছেন মিরাজ। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পথে ২০০০ রানের মাইলফলক ও ২০০-এর বেশি উইকেট তুলে এই ডাবলের ক্লাবে নাম লিখান মিরাজ। ৫৩ টেস্টে এই কীর্তি গড়ে চতুর্থ দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসেবে এমন বিরল রেকর্ড গড়ার পথে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন একসময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম এই রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব তবে সেটি ছিল ৫৪ ম্যাচে। সেখানে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে নাম লেখালেন মিরাজ তার চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলেই। এরপর চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে দুপুরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিটাও তুলে নিয়েছেন। ওয়েসলি মাধেভেরের বল শর্ট ফাইন লেগে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অংক স্পর্শ করেন তিনি। হেলমেট খুলে ব্যাট তুলে ড্রেসিংরুমে যেন বার্তা দিলেন বিপদে এভাবেই লড়াই করতে হয়। এ জন্য তাকে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪ বছর ২ মাস ২৬ দিন। গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে দর্শকেরা করতালিতে তাকে দিলেন বীরের সংবর্ধনাও। দ্বিতীয় দিন শেষ বিকালে ২৭৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে এক রানের লিড নেয়া দল মিরাজের সেঞ্চুরিতে শেষ পর্যন্ত ২১৭ রানের লিড পায়। পরে বল হাতেও জাদু দেখান মিরাজ। ২১.১ ওভারের স্পেলে মাত্র ৩২ রানে নেন পাঁচ উইকেট। ২০০০ রান ও ২০০ উইকেটের ডাবলসের তালিকায় যৌথভাবে চারে রবীন্দ্র জাদেজা। ৪২ ম্যাচে এমন কীর্তি ছুঁয়ে শীর্ষে ইংলিশ লিজেন্ড ইয়ান বোথাম। দুইয়ে থাকা ইমরান খান ও কপিল দেবের এই রেকর্ড গড়তে লেগেছে ৫০ টেস্ট। আর টেস্টের এই বিরল রেকর্ড করতে রবিচন্দ্রন অশ্বিন অশ্বিনকে খেলতে হয়েছে ৫১ ম্যাচ। আগের দিন ১৬ রানে অপরাজিত থাকা মিরাজ গতকাল শুরুতেই জীবন পান। ৮৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভিনসেন্ট মাসেকেসার বল কাট শটে ব্যাটে গ্লাভস ছুঁয়ে স্লিপে যাওয়া ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি উইকেটরক্ষক তাফাদজোয়া সিগা। এরপর ১১৮তম ওভারের চতুর্থ বলেই এলবিডব্লিউ’র আবেদন করেন মাসেকেসা। সে যাত্রায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক থাকা অবস্থাতেই মিরাজ নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন অলরাউন্ডার হিসেবে। তবে তিনি নিজেকে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারছিলেন না। টেস্ট অভিষেকে তিনি ঝলক দেখান বল হাতে। তাকে বোলার হিসেবে দলে বিবেচনা করা হতো। তবে ধীরে ধীরে তিনি খুঁজে পান নিজেকে। ২০২১, চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন। তখনও বাংলাদেশ ছিল ব্যাটিং সংকটে। গতকাল ঠিক একই রকম দলের বিপদে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গল্পটা লেখেন। তাইজুল ইসলাম আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৮ উইকেটে ৩৪২ রান। সেখান থেকে পেসার তানজিম হাসান সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে নবম উইকেটে গড়েন ৯৬ রানের মূল্যবান জুটি । তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে কিছুটা শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন মিরাজ। রিভার্স সুইপ খেলে তানজিম আউট হন ৪১ রানে। মিরাজ তখন অপরাজিত ৯৮ রানে, বাকি তখন কেবল এক উইকেট। ক্রিজে গিয়ে হাসান গিয়ে অবশ্য প্রথম বল ঠেকিয়ে দেন সহজেই। তবে ওয়েসলি মাধেভেরের করা পরের ওভারের তৃতীয় বলে সিঙ্গল নিয়ে মিরাজ পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। তার আগের সেঞ্চুরিটি ছিল ২০২১ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই মাঠেই আট নম্বরে নেমে। এবারের সেঞ্চুরি সাতে নেমে। গত অক্টোবরে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ খেলে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ৯৭ রানে। সেঞ্চুরি করে রেকর্ডের আরও একটি ইতিহাস গড়েছেন তিনি। একই সিরিজে ম্যাচে ১০ উইকেট ও সেঞ্চুরি করা সপ্তম ক্রিকেটার মিরাজ।