খেলা
স্বস্তির জয়
ইশতিয়াক পারভেজ
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
সিলেট টেস্টে চারদিনে বাংলাদেশ হেরে যায় জিম্বাবুয়ের কাছে। ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই হারের পর থেকে টাইগারদের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে উঠতে থাকে প্রশ্ন। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে কতই না আলোচনা-সমালোচনা। রীতিমতো নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ! এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে তিন দিনেই ইনিংস ব্যবধানে জয়কে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন বললে কি ভুল হবে? গেল বছর দেশের মাটিতে একের পর এক হার। প্রায় প্রতিটি হারের অন্যতম কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। সেখান থেকে বের হয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০৬ রান ও ইনিংস ব্যবধানে জয় তুলে নিয়ে নিজেদের ফের প্রমাণ করলো টাইগাররা। ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিকের সেঞ্চুরিতে ফেরে স্বস্তি, এরপর টপ অর্ডার নিজেদের পুরোপরি মেলে ধরতে না পারলেও বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সেঞ্চুরি করলেন ৭ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব। লেজের শক্তিতে শেষ পর্যন্ত টাইগারদের প্রথম ইনিংসে স্কোর পৌঁছে ৪৪৪ রানে। গেল ১২ মাসে ১০টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। সেখানে ২০ ইনিংসে মধ্যে চারশ ছাড়ানো স্কোর ছিল মাত্র একটি, গেল বছর রাওয়ালপিন্ডিতে ৫৬৫। তিনশ’ ছাড়ানো ইনিংসও ছিল একটিই। এক বছরের এই পরিসংখ্যান বলতে ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা। এমন পরিস্থিতিতে গতকালের ৪শ’ ছাড়ানো ইনিংসটি দলের জন্য স্বস্তিই বলা চলে। সেই সুবাদে বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় ২১৭ রানের। আর বল হাতে আবারো মিরাজের যাদু। একাই তুলে নেন পাঁচ উইকেট। অপর স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান নেন এক উইকেট। মাত্র ৪২. ২ ওভারে ১১১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে কোনো ইনিংসে পাঁচ উইকেট ও সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখালেন মিরাজ। তবে জোড়া আঘাত হেনে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ছিল বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের। ব্রায়ান বেনেটকে ৬ রানে স্লিপে সাদমান ইসলামের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। একই ওভারে নিক ওয়েলচকেও সাজঘরে ফেরান এই স্পিনার। তার অফ স্টাম্পে রাখা ডেলিভারি না খেলে ছেড়ে দেন ওয়েলচ। বল প্যাডে লাগলে জোরালো আবেদন করলেও সাড়া মিলেনি আম্পায়ারের কাছ থেকে। তবে রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায়, স্টাম্পে লাগত বল। খালি হাতে ফেরেন ওয়েলচ। এরপর বল হাতে নিয়েই জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন নাঈম হাসান। তার অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বল ডিফেন্স করতে গেলে ৭ রানে করা শন উইলিয়ামসের ব?্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো সাদমানের হাতে। দলীয় ২২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে নিয়ে দলের হাল ধরেন বেন কারান। ৪৭ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছুর আভাসও দিচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটার। কিন্তু এ জুটি ভেঙ্গেই উইকেট প্রাপ্তির শুরু করেন মিরাজ।মিরাজের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। এর আগে ব্যক্তিগত ১৬ রানে জীবন পেয়েছিলেন এই মিরাজের বলেই। তবে সেবার বেঁচে গেলেও তার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি আরভিন। শেষ পর্যন্ত ৫৬ বলে করেন ২৫ রান। সে ওভারের শেষ বলে ওয়েসলি মাধেভেরেকেও তুলে সফরকারীদের বড় চাপে ফেলে দেন মিরাজ। তার ভেতরে ঢোকা বলে ডিফেন্স করতে গেলে লাইন মিস করে লাগে প্যাডে। আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন মাধেভেরে। কাজ হয়নি, খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে। পরের ওভারে ফিরে টাফাডজোয়া সিগাকেও ফেরান মিরাজ। আগের বলেই আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন সিগা। কিন্তু পরের বলেই শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরে যান এই ব্যাটার। তৃতীয় ব?্যাটসম?্যান হিসেবে শূন্য রানে ফিরলেন সিগা। স্কোরবোর্ডে ২০ রান যোগ হতে বড় শটের চেষ্টায় কাটা পড়েন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। তবে এক প্রান্ত আগলে জিম্বাবুয়েকে আশা দেখাচ্ছিলেন বেন কারেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফিফটি তুলে নেওয়ার আগেই তাকে ফেরান মিরাজ। একই সঙ্গে পূর্ণ করেন নিজের ফাইফারও। স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক জাকের আলীর গ্লাভসে ক্যাচ দেন কারেন। ১০৩ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন এই ওপেনার। এরপর রিচার্ড এনগাভারাকে ছাঁটাই করেন তাইজুল। আর ভিনসেন্ট মাসেকেসা রানআউট হলে শেষ হয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস।
পাঠকের মতামত
আনন্দ করতেও ভয় লাগে - কাল কী হবে ভেবে