বিশ্বজমিন
বাস করতেন মাটির ঘরে
‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুখিকার মৃত্যু
মানবজমিন ডেস্ক
(৭ ঘন্টা আগে) ১৪ মে ২০২৫, বুধবার, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্টদের অন্যতম উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মুখিকা আর নেই। তিনি ৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুতে এক অনন্য ও ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটলো। তার প্রভাব শুধু লাতিন আমেরিকা নয়, বিশ্বজুড়ে অনুভূত হয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু অরসি এক্সে শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘আমাদের জন্য যা কিছু করেছো, তোমার যে গভীর ভালোবাসা ছিল মানুষের প্রতি- তার জন্য ধন্যবাদ।’ মুখিকা দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যনালির ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তবে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ প্রকাশ করা হয়নি।
বিপ্লবী থেকে রাষ্ট্রপ্রধান: হোসে মুখিকার জীবন ছিল রূপকথার মতো। তরুণ বয়সে তিনি ছিলেন একটি সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন টুপামারোসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই সংগঠন ১৯৬০-এর দশকে উরুগুয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গোপন প্রতিরোধ অভিযান চালাত। এই সময়ে তিনি চারবার বন্দি হন, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান এবং দুইবার জেল থেকে পালান। ১৯৭৩ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর তাকে ‘নয় বন্দির’ একজন হিসেবে চিহ্নিত করে দীর্ঘ ১৪ বছরের কঠোর কারাবন্দি অবস্থায় রাখা হয়। এ সময়ে তিনি মানসিক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে গেছেন, এমনকি পিঁপড়ার সঙ্গে কথা বলতেন বলেও জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়া জীবনের বড় প্রাপ্তি নয়, বরং কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটাই ছিল সবচেয়ে আনন্দের।
এক অনন্য শাসক: ২০০৫ সালে তিনি প্রথমবার মন্ত্রী হন এবং ২০১০ সালে ৭৪ বছর বয়সে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বিশ্বের চোখে তখনও তিনি অনেকটাই অচেনা। কিন্তু তার শাসনকালেই উরুগুয়ে বৈপ্লবিক সামাজিক সংস্কারের দিকে এগোয়- গর্ভপাত বৈধকরণ, সমলিঙ্গ বিবাহের স্বীকৃতি এবং গাঁজার বাজার রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ- যা তাকে বিশ্বমঞ্চে এক ব্যতিক্রমী নেতায় পরিণত করে।
এক সাধারণ জীবনের রাজনীতিক: মুখিকা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও রাজপ্রাসাদে না থেকে স্ত্রী লুসিয়া টোপোলানস্কির সঙ্গে মাটির ঘরে বসবাস করতেন। তার ব্যক্তিগত গাড়ি ছিল একটি পুরোনো নীল রঙের ১৯৮৭ সালের ভক্সওয়াগন বিটল। নিজের বেতনের বড় অংশ দান করতেন। গায়ে সাধারণ পোশাক, কোনো অতিরিক্ত নিরাপত্তা ছাড়াই চলাফেরা করতেন। একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, লোকেরা বলে আমি নাকি দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট। আমি বলি, যারা সারাজীবন চায় আরও বেশি, তারাই আসলে দরিদ্র। কারণ তারা কখনই সন্তুষ্ট নয়।
সমালোচনা ও উত্তরাধিকার: যদিও মুখিকার জনপ্রিয়তা ছিল উচ্চমাত্রায় (শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ সমর্থন), তার শাসনকাল নিয়ে কিছু বিতর্কও ছিল। তিনি শিক্ষা খাতের সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হন। তাছাড়া সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজেট ঘাটতির কারণে তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তবে, তিনি কখনও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হননি এবং গণতন্ত্রকে কখনও হুমকির মুখে ফেলেননি। ২০২০ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। কিন্তু তার প্রভাব রাজনৈতিক অঙ্গনে অটুট ছিল। তার রাজনৈতিক উত্তরসূরি ইয়ামান্দু অরসি ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তার দল ফ্রেন্তে আমপ্লিও সংসদে সর্বোচ্চ আসন পায়। ২০২৩ সালে মুখিকা ঘোষণা দেন যে তিনি ক্যান্সারে ভুগছেন। এরপর থেকে মৃত্যু নিয়ে তার মন্তব্যগুলো হয়ে ওঠে আরও দার্শনিক। শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মৃত্যু অনিবার্য, এটা বুঝেই জীবনকে উপভোগ করতে হয়। হয়তো মৃত্যু জীবনের লবণের মতোই।
পাঠকের মতামত
Rest in peace comrade .
এক জন সদাশয় উদার চিত্তের রাজনীতিকের প্রয়ান হলেও শুদ্ধচারির উদাহরণটি লোক মুখে উচ্ছারিত হবে বহু কাল।