শেষের পাতা
টানা ১১ রাত গুলিবিনিময় ভারতের প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে মোদির রুদ্ধদ্বার বৈঠক
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবারভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনার মধ্যে রণংদেহী মনোভাব ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে ভারত। নিয়মিত সামরিক মহড়া চলছে। এরই মধ্যে সীমান্তের বিভিন্ন সেক্টরে টানা এগারো দিন ধরে গুলিবিনিময়
চলছে। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নানা স্তরে একের পর এক কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যেই তিন বাহিনীকে যথাযথ পদক্ষেপের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিংয়ের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে তিনি এর আগে বিমান বাহিনী প্রধান এডমিরাল এপি সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠীর মধ্যে পৃথক বৈঠকের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এপি সিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রোববার দিল্লিতে বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে কাজ করা এবং যারা ভারতের দিকে খারাপ নজর রাখে তাদের ‘যোগ্য জবাব’ দেয়া তার দায়িত্ব।
তার মতে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে, সৈন্যদের নিয়ে কাজ করা এবং দেশের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব। যারা আমাদের দেশের দিকে খারাপ নজর রাখে তাদের উপযুক্ত জবাব দেয়াও আমার দায়িত্ব।
সোমবার ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর আটটি অগ্রবর্তী সেক্টরে পাকিস্তানি সেনারা বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানের গুলি চালানোর টানা ১১তম রাত বলে জানানো হয়েছে।
জম্মুর একজন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানিয়েছেন, ৪ঠা ও ৫ই মে রাতে, জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধার, নওশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুরের বিপরীতে নিয়ন্ত্রণরেখায় ছোট অস্ত্র থেকে গুলি চালিয়েছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এবং আনুপাতিকভাবে জবাব দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, জম্মু অঞ্চলের পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের দক্ষিণে জম্মু, রাজৌরি ও পুঞ্চ এবং কাশ্মীর উপত্যকার বারামুল্লা ও কুপওয়ারার পাঁচটি সীমান্ত জেলা জুড়ে রাতভর গুলিবিনিময় হয়েছে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে।
এদিকে, ভারতের পশ্চিম দিকে ভারতীয় সেনার একের পর এক মহড়ার ছবি সামনে আসছে। রোববার রাত ৯টা থেকে ৯.৩০ মিনিট পর্যন্ত পঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ব্ল্যাকআউট ড্রিল হয়েছে। পাঞ্জাবের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা এই আধ ঘণ্টা এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল। যতক্ষণ ড্রিল চলে ততক্ষণ বেজেছিল হুটার।
জানা গেছে, প্রশাসনের তরফে বাসিন্দাদের আগেই অনুরোধ জানানো হয়েছিল, যাতে এই ৩০ মিনিট সময় তারা বাড়িতে কোনো ইনভার্টার না জ্বালান, কোনো জেনারেটর না চালান। এই সময় কোনো আলো যেন বাড়ির বাইরে না আসে, তার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার দীপশিখা শর্মা জানিয়েছেন, এটি রুটিন প্রস্তুতির অঙ্গ ছিল। এই নিয়ে অযথা আতঙ্কের কোনো কিছু নেই।
ফিরোজপুরের ক্যান্টনমেন্টে এই ড্রিলের আগে, সমপ্রতি উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনার মহড়া। আপৎকালে বিকল্প রানওয়ে হিসেবে গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষমতা যাচাই করতেই এই মহড়া চলে।
ভারতীয় নৌবাহিনীও ১লা মে থেকে আরব সাগরে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ৭ই মে পর্যন্ত আরব সাগরে লাইভ ফায়ারিং ড্রিল জারি থাকবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। লাইভ ফায়ারিং ড্রিল হলো যুদ্ধপরিস্থিতির মতো পরিবেশ তৈরি করে অনুশীলন করা। এই মহড়া মূলত অস্ত্র পরীক্ষা এবং যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য করা হয়। সমুদ্রে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর রণতরীও মোতায়েন রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে রণকৌশল এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।