ঢাকা, ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বিমান বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক মোদির

কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত

মানবজমিন ডেস্ক
৫ মে ২০২৫, সোমবার
mzamin

পেহেলগাম ইস্যুতে এখনো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই ঘটনার দশম দিনেও কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে  গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদি। বিশ্লেষকরা মনে করেন বড় ধরনের যুদ্ধ না হলেও পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয় পাশের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা বাঙ্কার নির্মাণ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, তারা যুদ্ধ চান না। কেননা, এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবেন তারা। ইতিমধ্যেই তাদের জীবনযাত্রার মান বেশ খারাপ হয়ে পড়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ফলে স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। 

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রোববার ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমর প্রীত সিংয়ের সঙ্গে  বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কল্যাণ মার্গে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠি। এ খবর দিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই বলছে, এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান। এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার একদিন পর নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিএস) একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভারত সরকারের তরফে বলা হয়, হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদেরকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন করা হবে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে অভিযানের ধরন, লক্ষ্যবস্তু ও সময় নির্ধারণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন মোদি। এদিকে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিরোধী দল। সিসিএসকে দেয়া ব্রিফিংয়ে, সন্ত্রাসী হামলার আন্তঃসীমান্ত সংযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। পেহেলগাম হামলা নিয়ে ভারত সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি বাতিল অন্যতম। এর মাধ্যমে সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের অভিযোগে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়েছে দিল্লি। 

এদিকে শনিবার রাজস্থান সীমান্ত থেকে পাকিস্তানি এক রেঞ্জারকে আটক করেছে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী বিএসএফ। অনলাইন এনডিটিভি জানিয়েছে, ২৩শে এপ্রিল বিএসএফের কনস্টেবল পুরনাম কুমার সাহুকে আটক করে পাকিস্তান রেঞ্জার্সরা। তারপরই এ ঘটনা ঘটলো। আটক পাকিস্তানি রেঞ্জারের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তাকে বিএসএফের রাজস্থান ফ্রন্টিয়ারে রাখা হয়েছে। বিএসএফ জওয়ানদের আটক করার পরপর তা ফেরত দেয়ার জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সুন্দর প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু উত্তেজনাকর এই সময়ে পুরনাম কুমার সাহুকে পাকিস্তান ফেরত দেয়নি। ফলে আটক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে নিয়ে ভারত কী করবে তা পরিষ্কার নয়। ভারতের মিডিয়া থেকে দাবি করা হয়েছে যে, পাকিস্তানি এই রেঞ্জারকে আটক করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখার বিভিন্ন অংশে দশম দিনের মতো উস্কানিমূলক গুলি ছুড়েছে। এর মধ্যে আছে কুপওয়ারা, বারমুলা, পুনচব, রাজুরি, মেন্ধার, নাউশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুর। ভারতের সেনারা দ্রুততার সঙ্গে এবং উপযুক্ত জবাব দিয়েছে এর। তবে এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষে গোলাগুলিতে কোনো নিহতের খবর পাওয়া যায়নি। ওদিকে সাহুকে ফেরানোর জন্য কতোগুলো মিটিং হয়েছে। তবে তাকে কখন মুক্তি দেয়া হবে বা তার বর্তমান অবস্থা কী সে সম্পর্কে কোনো সময়সীমা বা তথ্য দেয়নি পাকিস্তান। 
অন্যদিকে হামলা বা পানি সরবরাহ বিঘ্নিত করলে পূর্ণাঙ্গ শক্তি ব্যবহার করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। নয়াদিল্লি যদি পানি সরবরাহ বিঘ্নিত করে এবং হামলা চালায় তাহলে পূর্ণাঙ্গ সামরিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে পাকিস্তান। ভারতকে সতর্ক করে এ কথা বলেছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি। তিনি শনিবার রাশিয়ার সমপ্রচার মাধ্যম আরটি’তে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। এনডিটিভি বলছে, রাষ্ট্রদূত জামালি বলেন, পাকিস্তানের ভেতরে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। এ বিষয়ে ইসলামাবাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে। তিনি আরও বলেন, ফাঁস হওয়া অন্য ডকুমেন্টগুলোতে দেখা যায়, পাকিস্তানের ভেতরে সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ জন্য আমাদের মনে হচ্ছে এই হামলা হবে এবং তা অত্যাসন্ন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে হামলা হলে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করবে। প্রচলিত অস্ত্রের এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করবে। উল্লেখ্য, ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে বেশির ভাগই পর্যটক। ওই ঘটনার পর পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে পাকিস্তান লালন করছে এবং তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভারতের। তবে এতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। ওদিকে হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে সম্পাদিত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। এই পানিচুক্তি স্থগিত করাকে ভারতের পানিযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রদূত জামালি। তিনি বলেন, ভাটিতে পানি সরবরাহ বিঘ্নিত করা অথবা বন্ধ করে দেয়া অথবা পানির প্রবাহের গতি পরিবর্তন করে দেয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমান। এমন হলে পূর্ণাঙ্গ শক্তি নিয়ে তার জবাব দেয়া হবে। এর আগে শুক্রবার জিও নিউজকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ঘোষণা করেন, যদি সিন্ধু নদের ওপর কোনো রকম অবকাঠামো নির্মাণের চেষ্টা করে ভারত, তাহলে তা টার্গেট করবে ইসলামাবাদ। অর্থাৎ সিন্ধু নদে কোনো বাঁধ নির্মাণ করলে তাতে হামলা চালানো হবে।  

পেহেলগাম ইস্যুতে লন্ডনের অল্ডউইচে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ)-এর যুক্তরাজ্য শাখার নেতাকর্মীরা।  সেখানে বিশাল সমাবেশ করেছেন তারা। সমবেত কয়েক হাজার মানুষ পাকিস্তানের পতাকা হাতে স্লোগান দিয়েছেন। বলেছেন, কাশ্মীর পাকিস্তানের। অনলাইন ডন বলছে, পেহেলগামে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এ হামলার জন্য দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ তা জোর দিয়ে অস্বীকার করেছে। তারা ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ইউকে সভাপতি আহসান দার জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়ে বলেন, এই সাগরপারে থাকা পাকিস্তানিদের ঢল প্রমাণ করে আমরা আমাদের মাতৃভূমির জন্য কতোটা নিবেদিত! ভারত কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে। এটি একটি সাজানো নাটক- একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অপারেশন। তিনি আরও বলেন, ২৫শে এপ্রিলেও আমরা ভারতের সমর্থকদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলাম। এবারো পিটিআই, পিএমএল-এনসহ সব দল এক ছাতার নিচে। গোটা জাতি এক হয়েই রুখে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। এই বিশাল মিছিলের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ ছিল সর্বদা সতর্ক।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status