শেষের পাতা
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই
স্টাফ রিপোর্টার
৫ মে ২০২৫, সোমবার
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। চলে গেলেন দেশের আইন অঙ্গনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী। প্রায় ৪৫ বছরে আইন পেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সিলেটের এই বাসিন্দা। দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতেও।
এক যুগ আগে চলে গিয়েছিলেন লন্ডনে। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে ফিরে আইন অঙ্গন থেকেই রাষ্ট্র বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ যাত্রা আর দীর্ঘ হলো না তার। প্রথিতযশা এ আইনজীবী গতকাল ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাদ এশা ধানমণ্ডির তাকওয়া মসজিদে প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকাল ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তার জুনিয়র আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির।
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শোকবার্তায় প্রধান বিচারপতি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক আলোচিত একুশে টিভি মামলা, ইত্তেফাকের মামলা, অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সংসদ সদস্যপদ সংক্রান্ত মামলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নিয়ে মামলা ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া আবদুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপদেষ্টাও ছিলেন। রয়েছে তার বিভিন্ন প্রকাশনা।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০২৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়মিত হন। শেখ হাসিনার শাসনামলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। ২০১৩ সালে জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়। একই বছরের ১৭ই ডিসেম্বর ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ইংল্যান্ডে চলে যান। যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় তিনি ২০১৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তিনি নতুন দল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ১৭ই আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১৯৮৬ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। দলটির সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলও ছিলেন। ১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে তার জন্ম। বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের দুই ছেলে ও এক মে?য়ে রয়েছে। দুই ছেলে ব্যারিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
পাঠকের মতামত
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। দেশের একজন সৎ ও ন্যায় বান ব্যারিস্টার আল্লাহ পাকের ডাকে চলে গেছেন।আমীন
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক স্যারের মৃত্যু বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। দেশের একজন সৎ ও ন্যায় বান ব্যারিস্টার আল্লাহ পাকের ডাকে চলে গেছেন।আমীন