ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

নিলামে উঠছে সাবেক এমপি ফারুকের শপিং কমপ্লেক্স

রাজশাহী প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
mzamin

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জবরদখল করে প্রতারণার মাধ্যমে ‘থিম ওমর প্লাজা’ নামের একটি অত্যাধুনিক শপিং মল কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ঋণ খেলাপির দায়ে রাজশাহীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও বৃহৎ শপিং মলটি নিলামে উঠতে যাচ্ছে। ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি পলাতক আছেন।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেটের পাশেই ‘থিম ওমর প্লাজা’র অবস্থান। ২০১১ সালে থিম রিয়েল স্টেট লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ওমর ফারুকের চুক্তি হয় ‘থিম ওমর প্লাজা’ মার্কেটটি ডেভলপ করার। চুক্তি অনুসারে, নিউ মার্কেটের উত্তর পাশে ফারুক চৌধুরীর ৩০ কাঠা জমির ওপর বহুতল ভবন হবে। যেখানে ৭ তলা পর্যন্ত থাকবে শপিং মল ও বাকি ৩ তলায় হবে আবাসিক ফ্ল্যাট বাড়ি। কিন্তু জমিটি আগে থেকেই আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে অর্থ নিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি গোপন করে চুক্তিবদ্ধ হন থিম রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে।

থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি মালিকানার শেয়ার অনুযায়ী ফারুক চৌধুরী ৩৫ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমানের ২৫ শতাংশ এবং বাকি দু’জনের থাকবে ২০ শতাংশ। থিম রিয়েল এস্টেটের সঙ্গে ২০১১ সালে চুক্তির পর ২০১২ সালে কাজ শুরু হয়। কাজের একপর্যায়ে এসে ফারুকের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে যায়। ভবন নির্মাণের শুরুর দিকেই কয়েক কোটি টাকার বিনিয়োগ হওয়ায় তারা কেউ-ই আর পেছনে ফেরেননি। ফারুক চৌধুরী শর্তানুযায়ী অর্থ প্রদান না করায় বাধ্য হয়ে কোম্পানি ঢাকার ধানমণ্ডি শাখার প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে প্রকল্পটির ওপর ২০১৫ সালের আগস্টের দিকে ২৬ কোটি টাকার ঋণ নেয়। এতে প্রকল্পটি ২০১৮ সালে পুরোপুরি শেষ হয়। ভবন চালুর এক বছরের মাথায় বাকি অংশীদারদের পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়ে নিজ দখলে নেন তৎকালীন আওযামী লীগের দাপুটে এমপি ফারুক চৌধুরী।

এ ব্যাপারে থিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি শেষ হলে সেখানকার দোকান এবং ফ্ল্যাট বিক্রি করে তিনি ব্যাংকের ঋণ ও পাওনাদারদের অর্থ পরিশোধ শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন ফারুক চৌধুরী তার দলীয় গুণ্ডা-পাণ্ডা নিয়ে ‘থিম ওমর প্লাজা’ মার্কেটটি দখল করে নেন এবং ‘থিম ওমর প্লাজা’র সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডেকে ভবনটি নিজের দাবি করেন। গার্ড ও ম্যানেজারদের অন্যান্য অংশীদারদের ঢুকতে দিতে নিষেধ করে দেন। আওয়ামী লীগের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় নিরুপায় হয়ে পড়েন বাকি অংশীদারগণ।

তবে, এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকার জেলা জজ আদালতে ২০১৯ সালে একটি সালিশি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ওই সময় দলীয় ক্ষমতাবলে আদালত সহ সবাইকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দাবিয়ে রেখেছিলেন এবং মামলার বিপক্ষে তিনি স্টে অর্ডার নিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মাস তিনেক হচ্ছে মহামান্য আদালত তার স্টে অর্ডার ‘ভ্যাকেট’ করে দিয়ে মামলাটি পুনরায় চালু করার আদেশ দিয়েছেন।
‘থিম ওমর প্লাজা’র প্রকল্প ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালে (মাত্র ১২ মাসে) ব্যাংক ঋণের ১৫ কোটি টাকা আমি পরিশোধ করি। কিন্তু ২০১৮ সালে শপিং মলটি জবরদখলে নেয়ার পর ফারুক চৌধুরী ব্যাংক ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে গাফিলতি করেন। এ কারণে ভবনটি নিলামে দেয়ার নোটিশ দিয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। বর্তমানে সুদ-আসলে ২১ কোটি ৫১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৬ টাকা ৫০ পয়সার খেলাপি ঋণ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঢাকা ধানমণ্ডি জোনের ব্যবস্থাপক হাসিবুল আসাদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা, বলেন মোস্তাফিজ। এ বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঢাকার ধানমণ্ডি শাখার ব্যবস্থাপক হাসিবুল আসাদ বলেন, সম্প্রতি আমি প্রিমিয়ার ব্যাংক ছেড়ে অন্যত্র জয়েন করেছি। লাস্ট যতটুকু জানি, তার মার্কেটটি অকশানের শেষ পর্যায়ের দিকে এগুচ্ছে। সময়মতো লোন পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি ধানমণ্ডি ও রাজশাহী শাখার দায়িত্বশীলরাও প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। যথাযথ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় প্রতিবেদনে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি।

একদিকে পলাতক থেকে ফারুক চৌধুরী আরজেএসসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে ‘থিম ওমর প্লাজা’র শেয়ারহোল্ডার বদলে ফেলেন। চারজনের বদলে ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমানসহ বাকি সদস্যদের না জানিয়ে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে ৯ জনের একটি নতুন মালিকানাপত্র তৈরি করেন। যেখানে স্ত্রী নিগার সুলতানা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান, বড় মেয়ে নাফিজা হক চৌধুরীকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ছোট দুই মেয়ে এবং এক ছেলে যথাক্রমে নাবিলা সুলতানা চৌধুরী ও রাফিয়া সারারা হক চৌধুরী ও মাশরুরুল হক চৌধুরীকে ডিরেক্টর পদে অধিষ্ঠিত করেন, যা কোনোভাবেই বৈধ নয়। পলাতক থেকেও সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা এখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ কাজটি সেরেছেন। কিন্তু নিয়ম অনুসারে, কোনো লিমিটেড কোম্পানি যদি তার শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার পরিবর্তন কিংবা কোনো নীতিমালার পরিবর্তন-পরিমার্জন চান, তবে তাদের জ্ঞাতার্থে এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন নিয়ে তা করতে পারে। চেয়ারম্যান একা কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু এখানে ফারুক চৌধুরী এককভাবে আরজেএসসি’কে প্রভাবিত করে অংশীদারিত্ব পরিবর্তন করেছেন, যা অবৈধ।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status