শেষের পাতা
ফ্যাসিস্ট সরকার অবর্ণনীয় জুলুুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল
স্টাফ রিপোর্টার
৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার
গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার এক অবর্ণনীয় শোষণ ও জুলুুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী
ফ্যাসিস্ট সরকার সকল ভাঁওতাবাজির নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, হানাহানি ও দেশের টাকা বিদেশে পাচারসহ এক অবর্ণনীয় শোষণ ও জুলুুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা এবং তাকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিষ্ঠুর আওয়ামী নেতাদের পৈশাচিক দমন-পীড়ন ছিল এজিদ বাহিনীর সমতুল্য। আজও ইমাম হোসেন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনদের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদেরকে সব সময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে।
ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও স্মরণীয় একটি দিন ১০ই মহররম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে এই দিনটিতে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়। তাই এই দিনটির মহিমা অসীম। এক বিয়োগান্তক বিষাদময় ঘটনার স্মৃতি বিজড়িত এদিন- যা পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করা হয়। অন্যায় অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) এদিনে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। এই দিন শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন।
তারেক রহমান বলেন, জাগতিক অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ইমাম হোসেন (রা.) এর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলমান ও বিশ্ববাসীর জন্য এক মহিমামণ্ডিত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইমাম হোসেনের কষ্ট ও শাহাদাত এবং ইসলাম বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছিলেন তা দুনিয়াতে এক বিশাল প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কেন্দ্রিক ন্যায়বিচার, তাকওয়া, ত্যাগ ও মানবিক মর্যাদার মর্মবাণী প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, হয়রত হোসেন (রা.) এর শাহাদাত অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন আদর্শিক সংগ্রামের উদাহরণ। ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট মোহে আচ্ছন্ন থেকে যারা ইনসাফ ও মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই ইমাম বাহিনী যুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কারবালায় ইমাম বাহিনীর শাহাদাত বরণ সর্বকালে দেশে দেশে অত্যাচারীর কবল থেকে মুক্ত হতে নিপীড়িত মজলুম মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আসছে। আমি শহীদ হযরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং তার শহীদ পরিবার, সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আশুরা হলো ইসলাম ধর্মের একটি স্মরণীয় দিন। হযরত মুহম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনদের শাহাদাত বরণের স্মরণে ১০ই মহররম ইতিহাসে এক মর্মস্পর্শী ও বেদনাদায়ক দিন। দিবসটি আজও আমাদেরকে গভীর দুঃখ ও বেদনায় ভারাক্রান্ত করে তোলে। বিশ্ব মুসলিমসহ সারা মানব জাতিকে শোক ও বেদনায় মুহ্যমান করে তোলে। আবার এ দিনটি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মজলুমের স্পষ্ট প্রতিবাদের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। অসত্য, জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামের মাধ্যমে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার বার্তা দেয়। মানবিক সাম্য ও মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কারবালায় হযরত ইমাম হোসেন (রা.) এর নিজ পরিবার, ঘনিষ্ঠজন ও অনুচরবৃন্দ জালিমের হাতে শহীদ হন। তাই শহীদে কারবালার মূল বার্তা হচ্ছে- নিপীড়িতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, পতিত আওয়ামী স্বৈরাচার সারা দেশকেই কারবালার প্রান্তরে পরিণত করেছিল। জুলুম-হিংস্রতা ও রক্তপাতের এক দুঃসহ দুঃশাসনের মধ্যে জীবন কাটাতে হয়েছে এদেশের মানুষকে। গত দেড় দশক ধরে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশ থেকে অদৃশ্য করা হয়েছিল। গণতন্ত্রকামী মানুষের স্থায়ী ঠিকানা ছিল কারাগারে। বিপুল জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। বিদেশে তার সুচিকিৎসার আবেদনকে অগ্রাহ্য করে তাকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়। কারবালার প্রান্তরে ইমাম বাহিনীর মহিমান্বিত আত্মত্যাগের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়ামী স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সংগ্রামী নেতাকর্মীরা ৫ই আগস্ট দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করে।