শেষের পাতা
বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
পাটগ্রামে কী হচ্ছে আপনারা দেখতে পারছেন। শুধু পাটগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলেছে একদল লোক। এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতোগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সেই সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়বো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
শুক্রবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর জামায়াতের আয়োজনে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াত আমীর বলেন, কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন তাহলে আমরা বলবো মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করবো। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। প্রশাসনকে ব্যবহার করে কিংবা কালো টাকার খেলা সহ্য করা হবে না। আপনাদের মনে রাখতে হবে আবু সাঈদদের সঙ্গীরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তারা আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে। আমরা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবো।
নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আমরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করছি। বহু ধরনের কথাবার্তা আমরা শুনতে পারছি। বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আলামত আমরা বুঝতে পারছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করে দেই, শেখ হাসিনার সকল বাহিনী ছিল, দুর্দান্ত প্রতাপ ছিল। জায়গায় জায়গায় নিজেদের লোক বসিয়ে ক্যাডার মাস্তানদের দিয়ে এরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। কিন্তু জনগণের জাগরণ-বিস্ফোরণ যখন হয়েছে, তখন কি তাদের কেউ রক্ষা করতে পেরেছে। তাহলে জনগণ এত মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না। এ লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন প্রিয় দেশের বুকে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্ন থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি এই সকল কিছু নির্ভুল পূর্ণাঙ্গ সমাধান হচ্ছে আল্লাহর কোরআন ও রাসুলের শাসন।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে দুইজন আমীর, দুইজন নায়েবে আমীর, দুইজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও একজন নির্বাহী পরিষদের সদস্যকে আমাদের বুক থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই সব নেতৃবৃন্দ বেঁচে থাকলে এই জাতিকে আশা জাগানিয়া কথা বলতেন। শহীদেরা আমাদের মুক্তির জন্য, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার জন্য লড়াই করেছিলেন। আমি যুবকদের বলতে চাই তোমরা জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত হও। লড়াই চালিয়ে যাও মুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত।
শফিকুর রহমান বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, পত্রিকার পাতা খুললে, স্যাটেলাইট মিডিয়ার সামনে দাঁড়ালে আমরা দেখতে পাচ্ছি বীভৎস কিছু মানুষের থাবা। আমাদের মায়ের ইজ্জতের ওপর এই থাবা। মানুষের জীবনের ওপর এই থাবা। জনগণের সম্পদের ওপর এই থাবা দেখছি। এমনি দিশাহারা তাদের কোন হুশ থাকে না। তারা নিজেরাই নিজেদের লোককে খুন করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। যদি ’২৪-এর পরিবর্তন না হতো তাহলে তোমরা কী এইভাবে মুক্ত বাতাসে আল্লাহর দেয়া আসমানের নিচে চলাফেরা করতে পারতা। আমি বিশ্বাস করি এই পরিবর্তনের আন্দোলনে সকল বিরোধী দলের সীমাহীন ত্যাগ ও কোরবানি জড়িত রয়েছে। দেশের আলেম-ওলামাদের পদে পদে অপদস্ত করা হয়েছে। তাদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে দাণ্ডাবেড়ি পরাতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে নাই। এরা ছিল রাজনীতির নামে শিষ্টাচারবিহীন এক প্রজাতি। এরা রাজনীতি শিষ্টাচার জানাতো না, জানাতো না বলেই অপকর্মের স্বাদ ভোগ করে তাদের বিদায় নিতে হয়েছে। এই অপকর্ম যদি আর কেউ করে তাহলে তাদের এর চেয়ে ভয়ঙ্কর স্বাদ অপেক্ষা করছে।
জুলাইযোদ্ধাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, চব্বিশের গণবিপ্লবে আহতদের আমরা চিকিৎসা করাতে পারি নাই। এই সকল অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল এদেশের জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়। তাদের বিচার হলে ভবিষ্যতে কেউ, কোনো দল এমন দুঃসাহস দেখাতে পারবে না।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমাকে অপরাধী বানানো হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমার মুক্তির সোপান হলো আবু সাঈদের আত্মত্যাগ। আবু সাঈদের মৃত্যু আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাংলাদেশের জন্য ইসলামী এবং দেশপ্রেমিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ করে আমাদের বিজয় সূচিত করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের কাছে আমরা দাবি করছি নির্বাচনের যতটুকু সময় বাকি আছে আপনি নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার জন্য মৌলিক সংস্কার, অপরাধীদের বিচার, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দেয়াসহ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের যত দাবি তা পূরণ না করে নির্বাচন দিলে এই জাতি সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে বলে মনে করে না
রংপুর মহানগর জামায়াতের আমীর আজম খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাহবুবার রহমান বেলাল, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী প্রমুখ। জনসভায় রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতে ইসলামীর দেয়া প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
পাঠকের মতামত
এই ভন্ড একেক সময় একেক রকম কথা কয়। এ কি প্রতারক না মুনাফিক? জন্তু জনোয়ারের কথা (ডাক/আওয়াজ) এক রকম থাকে, এর তো তাও না।
এই ভন্ড একেক সময় একেক রকম কথা কয়। এ কি প্রতারক না মুনাফিক? জন্তু জনোয়ারের কথা (ডাক/আওয়াজ) এক রকম থাকে, এর তো তাও না।
দেশে নির্বাচন না হলে পরিস্তিতি আর খারাপ হবে। যত তারা তারি নির্বাচন ততই দেশের জন্য মঙ্গল, কল্যান কর। জবাবদিহি মুলক সরকার ছাড়া কেউই দেশের বর্তমান অবস্তার পরিবরতন করতে পারবে না। আমরা চাই না দেশটা আফগানিস্তান, ইরান এর মত হয়ে যাক। আমরা স্বৈরতন্ত্র চাই না, সত্তর গণতন্ত্র চাই।