শেষের পাতা
তড়িঘড়ি নতুন টেলিকম নেটওয়ার্ক নীতিমালা ঘোষণার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ
স্টাফ রিপোর্টার
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
সরকারের টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫ ‘তড়িঘড়ি করে ঘোষণা’য় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর সামপ্রতিক ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ওলাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ উদ্যোগের বিষয়টি বিএনপি’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এই ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়ন বাধা দিতে পারে। এটা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (এসএমই, বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা সংগঠন) সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চূড়ান্ত করেন। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এই ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এই সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।
খসড়া নীতিমালার সম্ভাব্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের দিক তুলে ধরে ফখরুল বলেন, একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে। এসএমই-আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডি-রেগুলেশনের (নিয়ন্ত্রণ শিথিল) পরে এসএমই, বিশেষ করে স্থানীয় আইএসপি বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের সম্পদ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। বিদেশি মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে। ক্রস-ওনারশিপের ফাঁকফোকরে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, এসএমই, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব পক্ষকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার পর যেন এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি পক্ষপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইএসপি লাইসেন্সে একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এনএসপি লাইসেন্সের পেস্পকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ফিক্সড টেলিকম লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারা দেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চমান বজায় রাখাতে হবে যা এসএমইদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে, যা প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়বে।
নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
বিবাদ ও অসাম্যের শঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এন্টারপ্রাইজ সার্ভিসের সীমা অস্পষ্ট। মোবাইল অপারেটরদের ফাইবারভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা নীতিমালায় স্পষ্ট নয়। ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে।
জনগণের নীতিমালা হওয়া উচিত উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাবো।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেবার আগেই কিন্তু আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী কাছে আমাদের মতামতটা জানাতে চাই। আমরা মডার্ন টেকনোলজির বিস্তার চাই। বিএনপি চায়, টেকনোলজি সামনের দিকে যাবে কিন্তু তার সুফলটা যেন জনগণ পায়।
পাঠকের মতামত
নীতিমালা গুলো কি তাতো জানালাম না।