শেষের পাতা
চারদিনের রিমান্ডে সাবেক এমপি দুর্জয়
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
মানিকগঞ্জ-১ আসনের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি’র সাবেক পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকার লালমাটিয়া নিজ বাসা থেকে মানিকগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। রাতেই তাকে মানিকগঞ্জ সদর থানায় নেয়া হয়। মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ মাহবুব গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুর্জয়ের বিরুদ্ধে জেলার সদর, শিবালয় ও দৌলতপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দুর্জয় এজাহারভুক্ত আসামি।
দুর্জয় ৫ই আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরবন্দি ছিলেন। এ ছাড়া দুর্জয় ও তার স্ত্রী ফারহানা রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এদিকে দুর্জয়কে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার পর মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উঠানোর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই আদালত চত্বরে বিক্ষুব্ধকারীরা দুর্জয়ের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তোলে আদালতপাড়া। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে একটি হাইস-যোগে দুর্জয়কে আদালত চত্বরে আনা হলে সেখানে বিক্ষুব্ধরা ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে এ সময় দুর্জয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় দৌড়ে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করেন। বিকালে মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এসময় মানিকগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী উভয় পক্ষের শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি হুমায়ুন কবির। আসামিপক্ষে ছিলেন এডভোকেট নজরুল ইসলাম বাদশাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী। চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে দুর্জয়কে কারাগারে নেয়ার সময় আদালত প্রাঙ্গণে আবারো তোপের মুখে পড়েন দুর্জয়। শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা তাকে দ্রুত প্রিজন ভ্যানে উঠিয়ে কারাগারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার অনেকেই দুর্জয়কে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়ে। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন থানায় মামলা ছাড়াও নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি থেকে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে দুদকের তথ্য ভাণ্ডারে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১১ কোটি ২১ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পরিচালক আবুল হাসনাত বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এদিকে দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সাবেক এমপি দুর্জয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১১ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানকালে তার বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন থেকে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দুদকের সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া তার নিজ নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৩টি হিসাব এবং ব্যাংকের ৯টি হিসাবে ৪৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯০ টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য রয়েছে। মামলার তদন্ত পর্যায়ে এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, তার নামে পৈতৃক বাড়ি বৈকণ্ঠপুর, ঘিওর, মানিকগঞ্জে ১২ বিঘা জমি, মানিকগঞ্জ শহরে ১ তলা বাড়ি, বিভিন্ন ব্যাংকে ও ব্যবসায় বিনিয়োগসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।