শেষের পাতা
নির্বাচনকে ঘিরে চাঙ্গা সিলেটের রাজনীতির মাঠ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবারলন্ডন বৈঠকে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। নির্বাচন নিয়ে সংকট কাটছে। এই অবস্থায় নির্বাচনকেন্দ্রিক আস্থা ফিরছে সাধারণ মানুষের কাছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অন্তহীন অপেক্ষা। নির্বাচন নিয়ে যতই আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে, ততই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। তবে লন্ডন বৈঠকের পর দ্বিতীয় লন্ডন বলে পরিচিত সিলেটে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা প্রস্তুতি পর্ব শুরু করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন মানুষের কাছাকাছি। দিন যতই যাচ্ছে নেতারা ভোটের মাঠে তাদের গতিও বাড়াচ্ছেন। মাঠের প্রধান দল বিএনপি’র নেতারা সিলেটকে তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনায় নিচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট হচ্ছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি। ফলে দল হিসেবে বিএনপি সিলেটে জয় ছিনিয়ে নিতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সেই আভাস পাওয়া গেছে। জেলার ৬টি নির্বাচনী আসনে বিএনপি’র প্রার্থীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। সব প্রার্থীরাই দলের কাছে চাইবেন মনোনয়ন। তবে; দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একটি জায়গায় মিল রয়েছে, সেটি হচ্ছে সবাই ধানের শীষের পক্ষে একাট্টা। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই মাঠে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যারা মনোনয়ন পাবেন না তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে মাঠ চষে বেড়াবেন। জাতীয় নির্বাচনের জন্য সিলেটের বিএনপি কতোটুকু প্রস্তুত? এ প্রশ্নের জবাবে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর জবাব স্পষ্ট। তার মতে- বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। এজন্য বিএনপি সব সময়ই নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলও। সিলেটে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই রয়েছে। বিগত দিনেও আন্দোলনের পাশাপাশি আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। তিনি বলেন- বর্তমান সময়ে সিলেট বিএনপি পরিবারের প্রতিটি সদস্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে জনগণের কাছাকাছি যাচ্ছেন। হাটে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সবাই। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন- বিশেষ করে লন্ডন বৈঠকের পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। হাতে তুলে দিচ্ছেন ৩১ দফার লিফলেট। ভোট চাইছেন ধানের শীষের পক্ষে। কে মনোনয়ন পাবেন, কে পাবেন না সেটি এখন মুখ্য নয়; কাজ হচ্ছে জনগণের কাছাকাছি যাওয়া। ধানের শীষের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। সেটি করতে বিএনপি নেতারা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সিলেটে আগেভাগেই প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। যেহেতু দলের প্রধান আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের বাড়ি সিলেট। এবং দলীয় প্রধান এক সময় সিলেট জামায়াতের শীর্ষ নেতা ছিলেন, সে কারণে জামায়াতের পক্ষ থেকে এ জেলাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রার্থিতা ঘোষণা করে ভোটের মাঠে দলের নেতারা আগে-ভাগেই জোয়ার তুলতে চাইছেন। প্রার্থীকে প্রাধান্য দিয়ে দলীয় নেতারা বেশি সময় ব্যয় করছেন বলে জানিয়েছেন দলের তৃণমূলের নেতারা।
সিলেট জেলা জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল জয়নাল আবেদীন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- নির্বাচনের মূল প্রস্তুতি শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর। তবে এখন প্রার্থীরা মাঠে থেকে প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। তিনি বলেন- রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী জেলার ৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর এই ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীরা ভোটারের সাড়া পাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামী ভোটের মাঠে যোগ্যদেরই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বলে মনে করেন তিনি। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে সিলেট অঞ্চলে ইসলামী রাজনৈতিক দলের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক রয়েছে। জেলার একটি আসনে সব সময় ইসলামী দলগুলোকে ছাড় দেয় ভোটের মাঠে থাকা জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে কয়েকটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জোটবদ্ধ ভোট হলে তারাও সিলেট থেকে আসন চাইবে। যদি জোটবদ্ধ না হয় তাহলে তারা এককভাবে নির্বাচন করবে। সিলেট জেলা মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মো. দিলওয়ার হোসেন জানিয়েছেন- সিলেটে তাদের দলের পক্ষ থেকে এখনো প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়নি। সেটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হয়ে যাবে। তবে সিলেটে তার দল নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বিশেষ করে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সিলেট অঞ্চলে খেলাফত মজলিসের ভোটব্যাংক রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সিলেটের ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। পূর্ব সিলেটে জমিয়তের রয়েছে শক্তিশালী ভোট ব্যাংক। মাদ্রাসা অধ্যুষিত এলাকাগুলোকেই জমিয়ত নিজেদের ভোট বলে দাবি করে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক ক্বাসেমীর বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে। তিনি নিজেও এবার ঘন ঘন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। কয়েক মাস আগেও সিলেটে জমিয়ত দ্বিধাবিভক্ত ছিল। এরই দ্বিধা বিভক্তিকে কমিয়ে এনে ঐক্যবদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে জেলায় জমিয়তের ভোটব্যাংক আরও মজবুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী জানিয়েছেন- সিলেট অঞ্চলে জমিয়ত নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তারা দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। বাকি চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা আগামী সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। তিনি বলেন- জমিয়ত আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে তারা যোগ্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন বলে জানান। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রম এখনো চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী এখনো পলাতক রয়েছেন। আর সিলেটে জাতীয় পার্টি বহুভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন দলের সিলেটের নেতারা।