শেষের পাতা
যে ঘটনায় প্রকাশ পেলো সিলেটের শাপলা’র কুকীর্তি
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারশাপলা হলিডে হোম। এয়ারপোর্ট রোড, সিলেট। এ হোমকে ঘিরে অপরাধের রাজত্ব গড়ে তুলেছে ফয়জুল খান আলম। মাদক সেবন,
অসামাজিক কাজ, ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল। চাঁদা আদায় করে তার অপরাধ নেটওয়ার্কের সিন্ডিকেট। তাদের কাছে জিম্মি সিলেটের অনেক রথী-মহারথী। একবার ফাঁদে পড়লে আর পালানোর সুযোগ নেই। এই হলিডে হোমের ভাড়াটে মালিক ফয়জুল। তার ভাই তাজুল খান চিহ্নিত অপরাধী। নগরের সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার পীযূষ গ্রুপের দুর্ধর্ষ ক্যাডার। এখনো সে বহাল তবিয়তে। একটি ঘটনায় ‘শাপলা হলিডে হোম’র কুকীর্তি প্রকাশ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগ আদালতের নির্দেশে ফয়জুল ও তাজুলের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছে পুলিশ। এখন ফয়জুল, তাজুল ও তাদের সিন্ডিকেটকে ধরতে চালাচ্ছে অভিযান। ঘটনা গত ১৫ই এপ্রিলের। ফয়জুলের কাছে টাকা পাবেন তার পরিচিতজন গোলাপগঞ্জের কায়স্থ গ্রামের বাসিন্দা মুহিনুর রহমান। টাকা দিচ্ছিলেন না ফয়জুল। এতে বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন মুহিন। মামলার বর্ণনা মতে, গত ১৫ই এপ্রিল টাকার জন্য ফয়জুলকে ফোন দেন মুহিন। এ সময় ফয়জুল পাওনাদার মুহিনকে বলে হোটেলে আসতে। কথামতো ওই দিন রাত ৮টার দিকে মুহিন টাকা নিতে শাপলায় যায়। তাকে একটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। এরপর ফয়জুল, তার ভাই তাজুল, ভাড়াটে সন্ত্রাসী এমদাদ ও সজিব দাস মিলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। একপর্যায়ে মুহিনের ফোন থেকে তার বন্ধু নগরের কাজিটুলার বাসিন্দা ও করিমউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী আসাদকে ফোন দিয়ে আসতে বলে।
খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে সেখানে যাওয়া মাত্র তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রথমে মারধর ও পরে কোপানো হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন আসাদও। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে তাজুল, ফয়জুল ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। ঘটনার পর উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মিয়া ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ এনে তাদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় সুস্থ হয়ে প্রথমে এয়ারপোর্ট থানায় এজাহার দাখিল করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। ২৪শে এপ্রিল সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন মুহিনুর রহমান। আদালতের নির্দেশে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সোমবার মামলা রেকর্ড করেছে। এয়ারপোর্ট থানার ওসি আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, পুলিশের একাধিক টিম হলিডে হোমে অভিযান চালিয়েছে। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ফয়জুল ও তাজুলের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজ সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তারা গ্রেপ্তার হলে অনেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাপলা হলিডে হোমের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত। রাত-বিরাতে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসে লোকজন। নামি-দামি গাড়ি নিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে লোকজন আসায় ওই এলাকায় ভিড় জমে থাকে। মহিলারাও আসে।
এখানে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসী বাহিনী থাকায় কেউই এসবের প্রতিবাদ করেন না। তারা জানিয়েছেন, ভবনের প্রথম তিন তলায় ফ্ল্যাট থাকলেও সেটি হোটেল হিসেবে ভাড়ায় ব্যবহার করা হয়। আর উপরের দু’তলায় হচ্ছে ফ্ল্যাট বাড়ি। অনেক পরিবার সেখানে ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত হোটেল হিসেবে ব্যবহার করে ফয়জুল ও তাজুল নানা অপকর্ম করে। নানা সময় এ হোটেলে অপকর্মের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা দেখেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে এই হলিডে হোমে যাতায়াত করতেন। এ কারণে ভয়ে কেউ তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করেন না। মুহিন জানিয়েছেন, তাজুল ও ফয়জুলের একটি নারী সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের দিয়ে বিভিন্ন কক্ষে অপকর্ম করায় ফয়জুল ও তাজুল।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, গাঁজা ও ইয়াবা পাওয়া যায়। এখানে সিলেট নগরের এলিট শ্রেণির লোকজন যাতায়াত করেন। যারাই ওখানে একবার গিয়েছেন তারা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছেন। ফয়জুলের পাতানো ফাঁদে পড়ে তারা নিয়মিতভাবে তাকে চাঁদাও দিতেন। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকেই মুখ খোলেন না। তিনি জানান, ফয়জুল ও তাজুল নিজেরাই বেপরোয়া। তারা নারীদের নিয়ে মাদক সেবন করে। আর সেবনের এসব ছবিও সম্প্রতি সময়ে নানা জনের কাছে পৌঁছেছে। এলাকার মানুষ তাদের এই রঙ্গলীলার দৃশ্য দেখার পর ক্ষুব্ধ। ঘটনার দিন হলিডে হোমের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা বাবুল মিয়া হামলার দৃশ্য দেখে এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ এনেছিলেন। বাবুল মিয়া কেন এ কাজ করলো এ কারণে তার উপরও চড়াও হয় তাজুল ও তার ক্যাডার বাহিনী। ভয়ে বাবুল মিয়া চারদিন বাসার বাইরে ছিলেন। নানাভাবে হুমকির মুখে রেখেছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনকেও। এদিকে, মামলা হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছে ফয়জুল, তাজুল সহ আসামিরা। তাদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান এয়ারপোর্ট থানার ওসি। তিনি বলেন, আসামিদের ধরতে পুলিশ মাঠে রয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে ফয়জুল খান আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পাঠকের মতামত
পুলিশ কেন মামলা নেয়নি? এটার কোনো জবাবদিহীতা নেই? আমার মনে হয়, এদের অপকর্মের সাথে এই পুলিশরাও জড়িত। সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।
ফালতু কাজে সময় ক্ষেপন করলে - আইন শৃংখলা রক্ষা করবে কে?