শেষের পাতা
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব অত্যন্ত পজিটিভ
স্টাফ রিপোর্টার
১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব অত্যন্ত পজিটিভ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের চীন সফর বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
পাঁচদিনব্যাপী সফরে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভায় বিএনপি’র পক্ষ থেকে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীনের বিস্ময়কর উন্নতি, আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধি এবং তার ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’র ইতিবাচকতার কথা মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে লি হংসং বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। বলেন, দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের অবদানের কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দেশটিকে অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত ১৭ বছরের অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে আমরা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও তাদের সহায়তা চেয়েছি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। ফখরুল বলেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সঙ্গে সফরের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবেশ ও প্রযুক্তি উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমশক্তির সক্ষমতা, উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার বিষয়টিও উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ চীন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও রপ্তানি সুযোগ বৃদ্ধির বাস্তব পদক্ষেপ, কুনমিংয়ে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সহজতর করা এবং চীন-বাংলাদেশের মাঝে স্থলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগও আলোচ্য সূচিতে ছিল।
চীন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলেও জানান ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।