ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

নারী-শিশুর ওপর সহিংসতা

৫ মাসে ৯১০০ মামলা

ফাহিমা আক্তার সুমি
৩০ জুন ২০২৫, সোমবার

নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, নারীদের দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছেই। চলতি বছরের পাঁচ মাসে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৯ হাজার ১০০টি। পুলিশ সদর দপ্তরের মামলার পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হওয়ার পেছনে ঘাটতি থাকে, তখন ওই সমাজের মানুষকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত, ধর্ষণ কিংবা শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়। সেটিই 
হচ্ছে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পরিপূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিলম্বিত বিচার ব্যবস্থা।

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্যনুযায়ী, চলতি বছরের পাঁচ মাসে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৯ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১ হাজার ৪৪০টি মামলা, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৩০টি, মার্চে ২ হাজার ৫৪টি, এপ্রিলে ২ হাজার ৮৯টি এবং মে মাসে ২ হাজার ৮৭টি মামলা হয়েছে। এই পাঁচ মাসে শুধু ডিএমপিতে মামলা হয় ৮০৫টি।

এদিকে দেখা যায়, এ বছরের তুলনায় গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা কম ছিল। ২০২৪ সালের প্রথম পাঁচ মাসে মামলা ছিল ৭ হাজার ৩১৩টি। জানুয়ারিতে মামলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৩৭১টি, মার্চে ১ হাজার ৫০৯টি, এপ্রিলে ১ হাজার ৬২৩টি ও মে মাসে ১ হাজার ৭৬৭টি। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে শুধু ডিএমপিতে মামলা হয় ৬৭২টি। এর আগে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সাত মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয় ১০ হাজার ২৫৮টি। এবং ডিএমপিতে মামলা হয় ৬৪১টি। এ বছরে মোট মামলা হয় ১৭ হাজার ৫৭১টি। এবং ডিএমপিতে মোট মামলা হয় ১ হাজার ৪৬০টি। এ ছাড়া, ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয় ১৮ হাজার ৯৪১টি, ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬টি, ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬টি ও ২০২০ সালে ২২ হাজার ৫১৭টি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত আইন ২০১৩ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হবে। আরও বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল যদি ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার কারণসংবলিত একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করবেন। এর আগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর ধর্ষণের মামলার বিচার ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে। ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ সনদ প্রয়োজন হয়।

জাতিসংঘের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক গ্রুপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এমএসএফ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন ১৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। নানা অজুুহাতে শিশু ও নারী ধর্ষণ, নারীকে হেনস্তা এবং নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র দেশে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, স্বাভাবিক জীবন-যাপন এবং তাদের অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সর্বশেষ ২৬শে জুন কুমিল্লার মুরাদনগরের পাঁচকিত্তা গ্রামে প্রবাসীর এক স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওইদিন আনুমানিক রাত ৮টার দিকে একই গ্রামের ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন ফজর আলী। এরপর স্থানীয়রা তাকে মারধর করেন। পরে আহত ফজর আলী সেখান থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এ ঘটনায় মূল আসামিসহ ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে জড়িত মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেরাও নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। আমাদের এখানে প্রান্তিক বৈশিষ্ট্যের নারী যারা, যে সমস্ত পুরুষ মনে করে এই নারীদের উপরে যেকোনো ধরনের অন্যায় বা সহিংসতা হলে সে আসলে বিচার চাইবে না বা বিচার চাওয়ার মতো তার অবস্থা নেই বা তার হয়েও কেউ লড়বে না- এ ধরনের বাস্তবতায় এই সমাজের নারীরা বেশি নির্যাতিত হয়। এদিকে, অতীতে নারী ও শিশুদের ওপর যে সহিংসতাগুলো হয়েছে, সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার করতে না পারা। নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা। পুরুষকে প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে প্রাধান্য দেয়া- এই বিভাজনের কারণে ঘটনাগুলো বেশি ঘটাতে সাহস পাচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিকেরই সুরক্ষা রাষ্ট্রের নিশ্চিত করতে হবে। এই নারী-শিশুর ওপরে সহিংসতাসহ সকল ধরনের অপরাধকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলেই এ ধরনের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status