শেষের পাতা
নির্বাচনকে ঘিরে সাংগঠনিক পরিকল্পনা বিএনপি’র
কিরণ শেখ
২১ জুন ২০২৫, শনিবার
লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে বার্তা পাওয়ার পর নির্বাচন ঘিরে দলীয় পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। কমিটি গঠনসহ জনসম্পৃক্ত সব কর্মসূচি নির্বাচনকে ঘিরে করার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের জন্যও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জোরদার করা হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দলীয় কার্যক্রম সাজানো হচ্ছে। নির্বাচনের আগে নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় বিএনপি। ওদিকে নির্বাচনে এককভাবে, জোটগতভাবে নাকি সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করা হবে তা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মীমাংসা করতে চাইছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে নানা মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা চলছে। ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নবায়ন এবং দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে বিএনপি। গত ১৫ই মে থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হবে ১৫ই জুলাই। এ বিষয়ে বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যদিয়ে দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গঠন করা হচ্ছে নতুন কমিটি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়া হচ্ছে নতুন কমিটি। এই পুনর্গঠনের মাধ্যমে গত ১০ মাসে যারা দলের কর্মসূচিতে একাত্মতা না থেকে জোরজবরদস্তি করে দখল, চাঁদাবাজি এবং অবৈধভাবে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন তাদেরকে দল থেকে ঝেড়ে ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখন সাংগঠনিক কাজ করছি। সকল সাংগঠনিক কাজই এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক হবে। নতুন কমিটি হচ্ছে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হচ্ছে। এসবই এখন হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মানবজমিনকে বলেন, এখন বিএনপি’র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে তখন নির্বাচনকেন্দ্রিক মূল কাজ আমরা করবো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখেই এখন দলীয় কার্যক্রম সাজানো হচ্ছে। কোন আসনে কতোজন প্রার্থী আছে, সেগুলো বাছাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে যোগ্যতা, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করা হচ্ছে। এনিয়ে বিএনপি’র একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া বন্যা বা এ ধরনের যেকোনো দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা রয়েছে।
ওদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু না করলেও ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে বিএনপি। বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে ঘিরে নেয়া হচ্ছে প্রার্থীদের বিভিন্ন তথ্য। প্রত্যেক আসনে বিএনপি’র প্রায় ২ থেকে ৫ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এর বাইরে প্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি, চরিত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায় এবার দলীয় মনোনয়নে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রাধান্য দিয়ে তরুণ প্রার্থীদের সুযোগ দেয়া হবে বেশি। এ ছাড়া সরকার পরিচালনায় যারা দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবেন নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন- এমন প্রার্থীদেরও গুরুত্ব দেয়া হবে।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বিএনপি’র বড় ভূমিকা ছিল। এই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া মানুষের বিএনপি’র প্রতি ব্যাপক আগ্রহও রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১লা জুলাই থেকে দুই মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে চাঙ্গা রাখার কৌশল নিয়েছে দলটি। বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও এ নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনটি জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নিজেদের অংশগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় যেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি, সেগুলো বাস্তবায়নে আমরা কাজ করবো। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তখন নির্বাচন নিয়ে কাজ করবো। এর আগে আমাদের যে অঙ্গীকার, সেটা বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিসহ আমরা বিভিন্ন দিবস পালনের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করবো।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি এখন ৩১ দফা নিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে কথা বলছে। জনগণের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত হবে। বিভিন্ন বিষয়কেন্দ্রিক ওয়ার্কশপ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে এখন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অংশগ্রহণ বেশি থাকবে। আর বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, এই দলের নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এটা চূড়ান্ত করা হবে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, এখন আমরা সাংগঠনিক কাজ করছি। নির্বাচনের আগে নবায়ন এবং দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং দল গোছানোর কাজ চলবে।