শেষের পাতা
ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, নাশকতার শঙ্কা
সাজ্জাদ হোসেন
২১ জুন ২০২৫, শনিবার
জুলাই-আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে গণহত্যায় হাসিনার সরাসরি নির্দেশনার প্রমাণ মিলেছে। কিছুদিনের মধ্যেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে অতি স্পর্শকাতর এসব মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ ছাড়াও মামলার বিচার কার্যক্রমের তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া বানচালের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণ, প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর বিচারকগণ, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও অন্যান্য প্রসিকিউটররা ও তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আনাসর উদ্দিন খান পাঠান সহ সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরীসহ, আলমগীর হোসেনসহ তদন্ত সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় হসিনার বিচারকে কেন্দ্র করে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা, কয়েক দফা ককটেল বোমা হামলা, সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারা, আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের ও তদন্ত সংস্থার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ির অভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন তারা। এই বৈঠকে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তৎপরতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রসিকিউটরদের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ সময় বিচারকগণ জোর দিয়ে বলেন, এসব করে বিচার কাজকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
গত ১লা জুন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সেদিন শিশু একাডেমিসংলগ্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফটকের সামনে) ‘ককটেলসদৃশ পটকা’ বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও ১৬ই জুন সকালে, এই মামলার শুনানির পূর্বে রাজধানীর শিশু একাডেমি সংলগ্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফটক ও মাজার গেইটে কাছে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলেও অপরটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকেউ গ্রেপ্তার করা যায়নি।
সূত্র জানায়, হাসিনা সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া আন্তজার্তিক অপরাধ টাইব্যুনালের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। গত কিছুদিন আগে ১৩ জন স্টাফ বদলি হয়ে চলে গেলেও, নতুন করে কোনো স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়নি। এছাড়া, তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন টিম এমনকি ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের জন্যও পর্যাপ্ত গাড়ির ব্যবস্থা নাই। বিভিন্ন সরকারি অধিদপ্তরের অধীন কেন্দ্রীয় পরিবহন পুল থেকে ভাড়া করে গাড়ির সংকট মোকাবিলা করা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রাইব্যুনালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রসিকিউশন টিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ট্রাইব্যুনালের চারপাশে উঁচু নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা, পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করা, সাক্ষী ও বিচারকদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আসামিদের আনা-নেয়ার পথগুলোতে নিরাপত্তা প্রটোকল জোরদার করা সহ বিভিন্ন অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
আন্তর্জাাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন উদ্বেগের বিষয়টি ডিএমপি থেকে তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ঘাটতি হলে ডিএমপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মাদ তালেবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম মানবজমিনকে বলেন, প্রসিকিউশন অফিসে এবং তদন্ত সংস্থায় বেশ কিছু গাড়ির সংকট রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে তা চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তদন্ত সংস্থার জন্য আরও ৩টি গাড়ি দেয়া সহ সার্বিক বিষয় মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থাকে নিরাপত্তা আশঙ্কা নিয়ে যেকোনো বিষয় ট্রাইব্যুনালের নজরে আনতে বলে দেয়া হয়েছে। এমনকি তদন্ত করতে গিয়ে যদি কোনো সরকারি সংস্থার অসহোযোগিতার অভিযোগ থাকে সেটির জন্যও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া সহ ট্রাইব্যুনালকে জানাতে বলে দেয়া হয়েছে।