সরকার ভালো কাজ করছে আমাদের পথ দেখাচ্ছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে, নিঃসন্দেহে তারা ইতিমধ্যে অনেক কাজ করছে। ভালো কাজ করছে। আমাদেরকে পথ দেখাচ্ছে।  শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আশা করবো, আমরা সমস্ত রাজনৈতিক, ফ্যাসিবাদবিরোধী আমরা সবাই একজোট হয়ে একসঙ্গে তাদেরকে সহযোগিতা করব। আমাদের যে লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পৌঁছাতে পারবো। 

তিনি বলেন, এই বছরের মধ্যে সুইস ব্যাংকে অনেক টাকা জমা হয়েছে। আমি জানি না এই টাকাগুলো কাদের, কবে কীভাবে জমা হয়েছে। এই সংবাদটা দেখলেই প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের মনে হবে, তাহলে কি কোন পরিবর্তন হয়নি? এটা ফ্যাসিস্ট আমলে হয়েছে। আরেকটা প্রমাণ হয়েছে, তারা কী পরিমাণ লুটপাট করেছে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বেশ কয়েকটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি হচ্ছে, একটা গুরুত্বপূর্ণ দল আগামীকাল মনে হয় নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেবে। আমরা স্বাগত জানিয়েছি, এখনো স্বাগত জানাচ্ছি। কারণ আমাদের প্রত্যাশা তাদের প্রতি অনেক বেশি। আমরা প্রত্যাশা করি, এই তরুণেরা ও এই নবীনেরা যারা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা আশা করি, তারুণ্যের যে নেতৃত্ব, সেই নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। 

লন্ডন বৈঠকের আগে এবং পরের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশ্বস্ত হচ্ছি যে, সামনে ফেব্রুয়ারি মাসে একটা নির্বাচন হবে। তার মাধ্যমে আমাদের আশাগুলো কিছুটা হলেও পূরণ করার সুযোগ হবে। 

সংস্কার বিষয়ে ফখরুল বলেন, কতগুলো বিষয়ে আমরা একমত হচ্ছে, কতগুলো বিষয়ে একমত হচ্ছি না। যতগুলো বিষয়ে একমত হওয়া যাবে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করবো। যেগুলোতে একমত হবে না, নির্বাচনের পরে সেগুলো নিয়ে সংসদে আমরা আলোচনা করবো, ওই বিষয়গুলোয় আমরা একমত হবো। আর কথা বা আলোচনার মাধ্যমে আমার মনে হয়, এই বিশাল কাজ সম্ভব না। 

গণ-অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের এই সংগ্রাম প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে। নতুন করে আমরা জনগণকে একটা স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে, বাংলাদেশে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো। একটা গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবো। এটা ছিল জনগণের কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি।

মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের কথা উল্লেখ করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এবার অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছে আমরা সফল হবো কি না। ৯০-এর গণ-আন্দোলনের পরে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। চারটি নির্বাচনকে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলা চলে। তো কি গুণগত পরিবর্তন হলো? আবার তো প্রাণ ও রক্ত দিতে হলো। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান হতে হলো। আমরা কি এবার সফল হবো? এ সময় উপস্থিতির অনেকে বলেন, সফল হবো। পরে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাহলে সফল হবো। সফল হতে হলে কী করতে হবে? এবার যদি সফল হতে হয় তাহলে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা ১৫ বছর লুটপাটের পরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে। ইনশাআল্লাহ্‌ আগামীদিনে যে পরির্বতন আসবে, বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এই অঞ্চলে যত রাষ্ট্র সবাইকে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ছাড়িয়ে যাবো।  

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছে। জাতি দেখেছে, হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য বাম-ডান সবাই একসঙ্গে হয়েছে। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। আর এবার যদি কেউ মনে করে সরকারের গিয়ে ইচ্ছামতো চলতে পারবো। ওটা সম্ভব না।  

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলন করেছি। সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারবো। আর নির্বাচনে মানুষ কাকে ভোট দেবে সেটা জানি না। এ রকম একটা পরিস্থিতি হয়েছে, রাজনীতিতে শক্র কে বুঝতে পারছি না। 

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রধান উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেন, নির্বাচনের সময় এবং তারিখ গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে এটা থামবে কি না এখন বলা মুশকিল। তারপরে সংস্কারের কথা এসেছে, এই সংস্কার অভিনন্দিত হবে নাকি নিন্দিত হবে- এটা বলার সময় এখনো আসেনি।  

সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত ২১ বছর জীবন বাজি রেখে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি গড়ে উঠেছে। এখন বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। আর সরকারকে বলতে চাই, লন্ডন বৈঠকের পরে আপনারা বাস্তবে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন সেটা এখনো দৃশ্যমান না। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থার মধ্যে নেন।  
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ঐক্য তো রাজনৈতিক। যে পথে চলছি, কিছু পার্থক্য থাকলেও আমি আশা করবো, আমরা আগামীতেও একসঙ্গে চলবো। 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লড়াই শেষে একটা অভূতপূর্র্ব গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এই ঐক্যকে আমরা বজায় রাখতে চেয়েছি ২৪-এর আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার জন্য। রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরোধ থাকবে। তবে জাতীয় স্বার্থে আমাদের এক থাকতে হবে। 

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যে স্বপ্ন পূরণে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের পরিচিত হওয়া দরকার, সেই জায়গায় সংস্কারটা সবচেয়ে বড় জরুরি। আমাদের থেকে সংস্কার শুরু। 

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার এবং গণহত্যার বিচারের ব্যাপারে আমাদের সবার একমত হতে হবে। গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ আসলে দেয়া যায় না। সরকার যদি বিচারের সঠিক প্রক্রিয়াটা শুরু করতে পারে তাহলে আগামীতে যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সেই গণহত্যার বিচার শেষ করতে বাধ্য থাকবে। 

অনুষ্ঠানে বিএনপি’র চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এনসিপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ দলটির নেতাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।