শেষের পাতা
বিএনপি কর্মীকে আওয়ামী লীগ তকমা দিয়ে ডিবি অফিসে নির্যাতনের অভিযোগ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
৩০ জুন ২০২৫, সোমবার
সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী ও বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী নাসির মিয়াকে আওয়ামী লীগ তকমা দিয়ে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন ও ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ী নাসির মিয়া তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামের আকতার হোসেনের ছেলে এবং উপজেলা বিএনপি’র একজন সক্রিয়কর্মী। গত ২৫শে জুন জেলার শতকোটি টাকার যাদুকাটা বালুমহাল ইজারা নিয়ে বিএনপি’র দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে একপক্ষ কতিপয় ডিবি পুলিশকে কাজে লাগিয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
শনিবার সুনামগঞ্জের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ইজারাদার নাছির মিয়া বলেন, জেলার বৃহৎ যাদুকাটা-১ বালুমহাল বৈধভাবে ইজারা পাওয়ার পর ইজারাবঞ্চিত আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক ইজারাদার রতন মিয়া হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। পরে ইজারা কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ হয়। একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুবদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান যাদুকাটায় অংশ দাবি করলে অন্যপক্ষের মধ্যস্থতায় ৩০ শতাংশ শেযার দিতে রাজি হন তিনি। এরপরও মাহবুব হাইকোর্টে একটি মামলা করেন। গত ২৫শে জুন হাইকোর্টে আইনি লড়াইয়ের জন্য ঢাকায় যান তিনি। সেখানে এই মহালের সাবেক ইজারাদার ৫ই আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্যাতনের মামলার অন্যতম আসামি ফ্যাসিস্ট রতন মিয়া, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের নির্দেশে ফেরদৌস আলম ও খোরশেদ আলমের সহযোগিতায় সেগুনবাগিচার দুদুক কার্যালয়ের সামনে থেকে কয়েকজন ডিবি সদস্য মিন্টু রোডের কার্যালয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় তাকে। ওখানে অমানুষিক নির্যাতন এবং হাইকোর্টে মামলা না চালানোর জন্য চাপ দেয়া হয় তাকে। পরে অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান ডিবি অফিসে গিয়ে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে ডিবি’র কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে যান মাহবুবুর রহমান। পরে মুচলেকায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
নাসির বলেন, ডিবি অফিসে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি কোন দল এবং কার গ্রুপ করেন। তখন জানান, তিনি সুনামগঞ্জের বিএনপি’র একজন সক্রিয় কর্মী এবং জেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সুনামগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুলের গ্রুপ করেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আরও বেশি মারধর করা হয় এবং বলা হয় এই মামলা নিয়ে হাইকোর্টের বারান্দায় যেনো আমি না যাই, গেলে আমাকে তুলে নিয়ে গুম করে ফেলবে।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সুনামগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহবুব বলেন, যাদুকাটা ইজারা নিয়ে কারও সঙ্গে তার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। নাছির স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় মহাল ইজারা নিয়ে পরিবেশ ধ্বংস করতে চায়। ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের অভিযোগ সাজানো দাবি করে তিনি বলেন, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল এই নাটক সাজিয়েছেন। কামরুল এই আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী, আমিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। আমার জনপ্রিতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কামরুল এসব কাজ করাচ্ছেন। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সুনামগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনে বিএনপি’র অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, একজন সহজ-সরল ব্যবসায়ীকে ডিবি অফিসে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন কে করিয়েছে, নাসির নিজেই তা প্রকাশ করেছে। তিনি এমন নোংরামি রাজনীতি করেন না।
যাদুকাটা নদীর সাবেক ইজারাদার রতন মিয়া বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন বলেন, কোনো ব্যবসায়ীকে ডিবি পুলিশ কোথাও নিয়ে নির্যাতন করেছে, এমন তথ্য তাদের কাছে নেই।
এ অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের ঘটনার একটি নিউজের লিংক আমরা পেয়েছি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। আর ভুক্তভোগী যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন তবে আমরা তা খতিয়ে দেখবো।