শেষের পাতা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচার কার্যক্রম শুরু আজ
সাজ্জাদ হোসেন
২৯ জুন ২০২৫, রবিবারজুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দীর্ঘ ১১ মাস পরে যাত্রা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। আজকে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। রংপুরের বহুল আলোচিত আবু সাঈদ হত্যা মামলা এবং আশুলিয়ায় ৬ জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় করা মামলাগুলো দিয়ে শুরু হবে এই বিচারিক আদালতের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। এ ছাড়াও হাসিনা সরকারের আমলে দাখিল হওয়া কিছু পুরানো মামলা অর্থাৎ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলাগুলোও স্থানান্তর করে ট্রাইব্যুনাল-২তে আনা হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। প্রায় ৩০টি পুরানো মামলার বেশির ভাগ মামলাই ট্রাইব্যুনাল-২তে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়াও প্রসিকিউশন অফিসে নতুন করে দাখিল হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগগুলো ট্রাইব্যুনাল-২তে দাখিল করা হবে প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে।
আন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো দ্বারা গুম, খুন ও জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে গুমের অভিযোগে ৫টি মামলার বিচার কাজ চলমান। বাকি ২৫টি মামলা জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলা। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ২টি মামলার ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। বিবিধ মামলা হিসেবে ২৫টি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন ৭৩ জন। এদের মধ্যে ৮ জনকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ১৩২ জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন। এ ছাড়াও ২০৬ জনের বিভিন্ন অভিযোগে বিচার চলমান। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে। এ মামলার ৩০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা। এখন পর্যন্ত ৪ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। এরা হলেন-পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ।
এদিকে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন চলাকালে ৫ই আগস্ট আশুলিয়ায় ৬ জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মামলার ফরমাল চার্জ দাখিলও ট্রাইব্যুনাল-২-এ দাখিল হবে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় সাভারের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এই মামলায় ৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনে আরও ৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে -রনি ভূঁইয়া, মো. মাসুদুর রহমান, নির্মল কুমার দাস, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মো. আসাদুজ্জামান রিপন, যাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেনি। গত ২৪শে জুন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য আরও ১ সপ্তাহের সময় চেয়েছে প্রসিকিউশন। পরে ২রা জুলাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর গাজী এইচএম তামিম মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন অফিস তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার যাচাই শেষে এক সপ্তাহের মধ্যেই ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিচ্ছে। এতে করে বিচার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুননাল-২-এ কোন মামলাগুলো দাখিল হবে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে দাখিল হওয়া পুরানো কিছু মামলা ট্রান্সফার করে এখানে আনা হবে। আমরা মামলা ট্রান্সফারের আবেদন প্রস্তুত করেছি, শিগগিরই সেগুলো ট্রান্সফার করে এখানে আনা হবে। এ ছাড়াও সম্প্রতি সময়ে দাখিল হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনগুলো ফরমাল চার্জ আকারে এই ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বিগত আমলের তদন্ত সংস্থা থেকেও স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচার কাজ শুরু হবার মাধ্যমে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী মামলাগুলো আরও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গত ১৭ই জুন প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনাল-২-এর এজলাসে বসেন ৩ বিচারপতি। রীতি অনুযায়ী এদিন অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং অপর ২ জন সদস্য মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীরকে এজলাস কক্ষে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, আমরা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে কয়েকটি মামলা এবং নতুন কিছু মামলা ট্রাইব্যুনাল-২-এ দাখিল করবো। যেহেতু ট্রাইব্যুনালে অনেকগুলো মামলা দাখিল হয়েছে, সুতরাং একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এতগুলো মামলা নিষ্পত্তি করা কঠিন হবে। সেই বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়েছে। আমরা মামলাগুলো ভাগ করে দুটি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে যেন একইসঙ্গে অনেকগুলো মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায়।