বাংলারজমিন
সাংবাদিক ওয়াহেদ ফকিরের মামলা নিয়ে বিতর্ক, উত্তাল বগুড়া
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, বগুড়া থেকে
৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
একটি বাউল গানের কলি নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার এবং পরে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর ঘটনায় বগুড়ার সাংবাদিক অঙ্গন উত্তাল হয়ে উঠেছে। বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মঈনুদ্দীনের কিছু দুর্নীতির তথ্য আকার ইঙ্গিতে লেখায় আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল ওসি। সেই ক্ষোভ থেকেই ওসি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ ফকিরকে মামলায় জড়ায়। এর আগে শনিবার রাতে কোনো কথা ছাড়াই সাংবাদিক ওয়াহেদকে গ্রেপ্তার করে ওসি নিজেই। এরপর খুঁজতে থাকেন বাদীকে। টানা ২০ ঘণ্টা পার হলেও বাদীর অভাবে মামলা রুজু করতে পারেননি ওসি। পরে পাশের উপজেলা শাহজাহানপুর থেকে একজনকে অনেকটা জোর করে থানায় এনে বাদী করা হয়। বাদীর নাম পলাশ কুমার মহন্ত।
দৈনিক সামতাথা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক এফ শাহজাহান বলেন, ওসি সাংবাদিক ওয়াহেদকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি বর্তমান সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। একটি গানের কলি লেখা অপরাধ সেই আইন ওসি কোথায় পেলেন? কোনো কিছু যাচাই-বাছাই ছাড়াই একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ধৃষ্টতা কীভাবে দেখালেন? তার পেছনে কোন শক্তি কাজ করছে, তা জাতির সামনে হাজির করা হবে। দৈনিক ইনকিলাবের উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি মহসিন আলী রাজু বলেন, আমরা ১৬ বছর অপেক্ষায় ছিলাম একটা ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে। আমরা কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ পেয়েছিলামও। কিন্তু সেই লালিত স্বপ্ন ওয়াহেদ ফকিরের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর ঘটনায় অনেকটা মøান হয়ে গেল। পুলিশ কারও প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এভাবে একজন মাঠের সাংবাদিককে জেলে পাঠাতে পারে সেটা আমরা নতুন বাংলাদেশে কল্পনা করিনি। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সাংবাদিক সমাজকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মামলার বাদী পলাশ কুমার মহন্ত বলেন, সাংবাদিক ওয়াহেদ ফকিরের করা পোস্টটি সম্পর্কে তিনি রোববার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের ধর্মাবলম্বীদের একটি গ্রুপে দেখেন। এর আগে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। বিষয়টি জানার পর তিনি বগুড়ার পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন। সোমবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন বগুড়ার উদ্যোগে প্রথমে সাতমাথায় মানববন্ধন হয়। পরে শহরের জিরো পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকরা বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এসএম মইনুদ্দিনকে আওয়ামী দোসর উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রত্যাহারের দাবি করেন। পরে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি এসে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের পথ বের করার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। বৈষম্যবিরোধী গণমাধ্যম আন্দোলন বগুড়ার প্রধান সমন্বয়ক ও মানবজমিন পত্রিকার ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রতীক ওমরের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার সবুর শাহ লোটাস। বিক্ষোভ থেকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয় সদরের ওসিকে প্রত্যাহারের জন্য। এ সময়ের মধ্যে ওসির প্রত্যাহার এবং সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ ফকিরকে মুক্তি না দিলে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলন বেগবান করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।