ঢাকা, ৬ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বিবিসি’র প্রতিবেদন

বাংলাদেশ-ভারত পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, ক্ষতির শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

মানবজমিন ডেস্ক
৩ মে ২০২৫, শনিবার
mzamin

বেশ কয়েক মাস ধরে চলা বাকযুদ্ধের পর সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পথে প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশ। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পগুলোকে সস্তা আমদানি থেকে রক্ষা করতে ভারত থেকে সুতার আমদানি সীমিত করেছে বাংলাদেশ। ভারত তার বন্দর এবং বিমানবন্দর দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে আসছিল তা বন্ধ করে দেয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। গত বছরের আগস্টে তীব্র বিক্ষোভের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হতে থাকে। ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা। আর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির দায়ে ভারতের কাছে তাকে প্রত্যর্পণের দাবি করে আসছে বাংলাদেশ। যদিও হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এছাড়া দিল্লিও এখন পর্যন্ত ঢাকার ডাকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। উল্টো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হচ্ছে বলে সমালোচনা করছে ভারত। সম্প্রতি একজন হিন্দু  নেতার কথিত ‘হত্যাকাণ্ড’ নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছে তারা। তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের নিশানা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বলেছে, বেশির ভাগ ঘটনা রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে হিন্দু সমপ্রদায়ের অনুসারী ১০ শতাংশের কম। দুইদেশের এমন বিবাদে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্ষতির হিসাব করছে। 
বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য সুতা অত্যাবশ্যকীয় একটি পণ্য। যা এখনও সমুদ্র ও আকাশপথে আমদানি করা যায়, তবে এটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। ভারত ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সুতা রপ্তানি করে। যার এক-তৃতীয়াংশই স্থলবন্দর দিয়ে করা হয়েছে। বর্তমানে বন্ধ থাকা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা চালু থাকলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা উচ্চমানের তৈরি পোশাক সড়কপথে ভারতে পাঠাতে পারতেন, যেখান থেকে সেগুলো ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেত। এটি বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য একটি ধাক্কা বলে মনে করেন এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান আনিস আহমেদ। তিনি বলেন, ভারতীয় পথ ব্যবহার করে মালামাল এক সপ্তাহে পশ্চিমা দেশগুলোতে পৌঁছাত। সমুদ্রপথে তা আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেয়।

পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর দেশটি ৩৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ভারতের স্থল ও বিমানপথ ব্যবহার করে রপ্তানি করা হয়েছে। আনিস আহমেদ এ বিষয়টিকে বেশ কার্যকর বলে উল্লেখ করেছেন। সীমিত বিমান পরিবহন ক্ষমতা এবং স্বল্প সরঞ্জামের কারণে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো সরাসরি রপ্তানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি চীন সফরকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারত বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা স্থগিত করেছে বলে ধারণা করছে অনেকে। ওই সফরে ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বাংলাদেশকে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বলে অভিহিত করেছিলেন ড. ইউনূস। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, ‘চীনা অর্থনীতি সমপ্রসারণের ক্ষেত্র’ হয়ে উঠতে পারে এই অঞ্চল।

তার এই বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেতারা। বলেছিলেন, এটা ‘আক্রমাণত্মক’। ড. ইউনূসের মন্তব্য, চীনের কাছে ওই অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছে, যা দিল্লির মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে মাত্র ২০ কিলোমিটার প্রশস্ত শিলিগুড়ি করিডোর (‘চিকেনস নেক’) নামে পরিচিত যা নেপাল ও বাংলাদেশবেষ্টিত এবং তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার সন্নিকটে অবস্থিত।

বেইজিং-নয়াদিল্লি সীমান্ত উত্তেজনার ইতিহাস ও ১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারতের পরাজয়ের কারণে দেশটির প্রতিরক্ষা খাতের পরিকল্পনাকারীদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে কোনো সংঘাত বাধলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চীন ওই করিডোরকে নিশানা বানাতে পারে। বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন, অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং ওই বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল, আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়ন। 

এছাড়া ভারতীয় ভিসা নীতি কঠোর করায়ও বাংলাদেশে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভিসা দেয়া সীমিত করেছে ভারত। আগে পর্যটন, ব্যবসা, শিক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর ২০ লাখ বাংলাদেশি ভারত যেতেন। যা গত কয়েক মাসে কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। আবার, হাসিনার ভারতে থাকা এবং প্রত্যর্পণের দাবি এখনও একটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম বলেছেন, তাদের বুঝতে হবে যে হাসিনাকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার কোনো উপায় নেই। আমরা জানি যদি তাকে তুলে দেয়া হয় তাহলে তার কী হবে। আমার ধারণা ভারতের জনমতও বিষয়টি মেনে নেবে না। উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে ভারতের পোশাক প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বাংলাদেশের পোশাক আমদানির ওপর স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে। বাংলাদেশি বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আত্মঘাতী হতে পারে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status