ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

জকিগঞ্জের ছয় যুবককে বিক্রি করে দিয়েছিল মানব পাচারকারীরা

জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

রাজমিস্ত্রির কাজে কক্সবাজার গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সিলেটের জকিগঞ্জের সেই ৬ যুবককে উদ্ধার করেছে টেকনাফ থানা পুুলিশ। নিখোঁজ হওয়া পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, একটি মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছিল তারা। জানা যায়, গত ১৫ই এপ্রিল কক্সবাজার কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান সেই ৬ জন। নিখোঁজের ৬দিন পর অবশেষে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের রাজার ছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামেরমৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) সিলেট থেকে থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৬ই এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এরপর থেকে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারো কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না। এরপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাদের খোঁজ চেয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাতে টেকনাফের রাজার ছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। পুুলিশ ও পরিবারের সূত্রে জানা যায়, শহিদুল নামে এক ঠিকাদার জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে তাদেরকে বিক্রি করে দেয় একটি মানবপাচার চক্রের সদস্যদের কাছে। মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য শহিদুলের কাছ থেকে তাদেরকে কিনে নেয় মানবপাচারকারীরা। 

উদ্ধার হওয়া খালেদ হাসান বলেন, আমাদের যে ঠিকাদার ছিলেন তার শ্যালক এসে আমাদের খাওয়া দাওয়া করায়। এর পর আমাদেরকে একটি সিএনজিচালিত রিকশায় তুলে দেয়। পরে কয়েকবার রিকশা বদলানো হয়। আমাদেরকে বলে কাজের সাইট একটু পরে। এভাবে একটু পরে বলে বলে আমাদের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরে আমরা জানতে পারি আমাদের ঠিকাদার আমাদেরকে জন প্রতি ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছে। তারা আমাদের কোনো নির্যাতন করেনি, তিনবেলা খাবার দিয়েছে। আমাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা ছিল না, তবে আমাদের মোবাইলগুলো নিয়ে যায়।আব্দুল জলিল (৫৫) বলেন, শহিদুল নামে এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে আমরা দুই মাস কাজ করেছি। এই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয়। আমরা বাড়িতে যাওয়ার পর ৮ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সে আমাদেরকে শুধু কল করে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ বার কল দিয়ে বলত কাজে আসো তোমরা। বলতো ভালো কাজ আছে। ৫ তালা বিল্ডিংয়ে তোমরা কাজ করবা। 

শহিদুল আমাদের এখানে এনে দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাদের খোঁজে যখন নিউজ হয়, ইন্টারনেটে আমাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা আমাদের বলে তোমাদের এনে আমরা আতঙ্কে আছি। তোমরা মালয়েশিয়া কি যাবে না। আমরা বলছি আমরা মালয়েশিয়া যাব না, আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। নিউজের কারণে পুলিশের আসা যাওয়া শুরু হয়। তখন তারা আমাদের রাতে ছেড়ে দেয়। শাহিন আহমদ (২১) বলেন, তারা আমাদের নিয়ে একটি ঘরে রাখে। একদিন পরে তাদের বস আসে। বস এসে বলে আমাদের মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিবে। সেখানে আমরা গেলে অনেক কাজ করতে পারব অনেক টাকা ইনকাম করতে পারব। এরকম বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখায় তারা আমাদের। কিন্তু আমরা মানিনি। আমরা বলছি, আমাদের মা বাবার কাছে চলে যাব। আমরা রাজমিস্ত্রির কাজের জন্য আসছি, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য আসিনি। উদ্ধার হওয়া খালেদের পিতা খলাছড়া ইউপি সদস্য সফর আলী বলেন, আল্লাহর শুকরিয়া আমার ছেলেসহ এলাকার অন্য ৫ জন উদ্ধার হয়েছেন। আমরা অজানা আতংকে ছিলাম, কখন কি হয়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের নিউজের কারণে এবং পুলিশের সহযোগিতায় আমাদের সন্তানরা ফিরে এসেছে। তিনি সাংবাদিক, সংবাদপত্র এবং পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সফর মেম্বার আরো বলেন, উদ্ধারকৃত ৬ জন এখনো কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় সুস্থ অবস্থায় ভালো আছেন, প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে জকিগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছে দিবে পুুলিশ।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status