শেষের পাতা
কক্সবাজার গিয়ে জকিগঞ্জের ছয় যুবক নিখোঁজ
জকিগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবাররাজমিস্ত্রির কাজে কক্সবাজার গিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জের খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ৬ যুবক ছয়দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এরা হলেন- খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদি’র ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)।
পুলিশ জানায়, নিখোঁজ সবাই গত ১৫ই এপ্রিল কাজের উদ্দেশ্যে জকিগঞ্জ থেকে কক্সবাজার যান। মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করে ৬ জনের মধ্যে দু’জনের অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফ দেখাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। জানা যায়, গত ১৫ই এপ্রিল বিকালে জকিগঞ্জ উপজেলার লোহারমহল গ্রামের ৫ তরুণসহ ৬ জন কাজের জন্য কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৬ই এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছানোর পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
নিখোঁজ এমাদ উদ্দিনের চাচাতো ভাই ও নিখোঁজ খালেদ হাসানের চাচা আব্দুল বাছিত জানান, এমাদ উদ্দিন ও খালেদ আহমদসহ তাদের সঙ্গীয় সবাই ১৫ই এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়ে ১৬ই এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছান। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমাদ উদ্দিন কল দিয়ে বাড়িতে জানিয়েছে তারা সবাই কর্মস্থলে পৌঁছেছেন। এরপর আর যোগাযোগ করেনি। পরবর্তীতে বাড়ি থেকে কল করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর এমাদ ও খালেদের সঙ্গে থাকা অন্যদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তখন তাদের মোবাইল নাম্বারও বন্ধ ছিল। প্রথমে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। কিন্তু ছয় দিনেও কারও মোবাইলে কল না যাওয়ার কারণে সবার পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় জিডি করতে চাইলে পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে কক্সবাজারে জিডি করার জন্য। সেখানের থানায় জকিগঞ্জ থানা থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের লোকজন কক্সবাজারে চলে গেছে।
নিখোঁজ রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, রশিদ কয়েক বছর চট্টগ্রামে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল। চট্টগ্রামের ঠিকাদারের মাধ্যমে কক্সবাজার এইবার প্রথম গিয়েছে। কক্সবাজার যাওয়ার পর থেকে রশিদসহ সঙ্গে থাকা সবার মোবাইল ফোন বন্ধ। তবে ওই ঠিকাদারের নাম ঠিকানা রশিদের ভাইয়ের জানা নেই। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা তাদেরকে ওইখানে যে লোক নিয়েছে ওই লোক তাদেরকে কিছু করেছে।
নিখোঁজ খালেদ হাসানের বাবা ও খলাছড়া ইউপি সদস্য সফর উদ্দিন বলেন, তারা কাজের জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে ৫-৬ মাস সেখানে থাকে। ঈদের সময় বাড়িতে আসে। তাছাড়া সারা বছরই চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মঙ্গলবার আমার ছেলে বাড়ি থেকে যাওয়ার পরে আর কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় পরিবার আত্মীয়স্বজনরা অস্থির হয়ে পড়েছেন। খালেদের মা ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। রোববার সারারাত থানায় ছিলাম। যে ঠিকাদার নিয়েছিল তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ। থানার ওসি খবর নিয়ে আমাদেরকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের ওই ঠিকাদারের নাম রশিদ ও তার সঙ্গের অপর একজনের নাম বাবুল।
সফর উদ্দিন আরও বলেন, যে জায়গা থেকে তারা নিখোঁজ হয়েছে সেখানে অভিযোগ দেয়ার জন্য পুলিশ আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছে। আমাদের এলাকার অনেক লোক সেখানে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। তারাও তাদের মতো করে খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু কোথাও নিখোঁজ ৬ জনের মধ্যে কারও সন্ধান মেলেনি। এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, জকিগঞ্জ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে ৬ জন রাজমিস্ত্রি নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছি। নিখোঁজদের পরিবার থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা তাদেরকে সহায়তা করে যাচ্ছি। নিখোঁজদের মধ্যে দু’জনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের সর্বশেষ অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে দেখাচ্ছে। কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।