শেষের পাতা
দেওয়ানি ও ফৌজদারি আলাদা আদালতের পরিকল্পনা
রাশিম মোল্লা
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
প্রতিদিনই বিভিন্ন কারণে দেশের আদালতগুলোতে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। মামলার ভারে ন্যুব্জ আদালত। সাক্ষী জটিলতায় হাইকোর্টসহ নিম্ন আদালতে মামলার পাহাড় জমে আছে। এতে অর্থ খরচের ভোগান্তিতে পড়তে হয় বাদী-বিবাদী উভয়কেই। খরচ মেটাতে গিয়ে শেষ সম্বল ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয় বিচারপ্রার্থীদের। বর্তমানে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে প্রায় ৪৫ লাখ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেওয়ানি মামলা ও ফৌজদারি মামলার বিচার্য বিষয়, এজলাসের ধরন ও সাক্ষীর প্রকৃতি ভিন্ন। ফলে এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিচারকের গভীর মনোনিবেশ প্রয়োজন হয়। তথাপি, ব্যাংলাদেশের অধস্তন আদালতসমূহে বর্তমানে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ানি আপিল, দেওয়ানি রিভিশন, ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশন এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষ আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এতে বিচারকের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে মামলা জট ও দীর্ঘসূত্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য পৃথক এখতিয়ার প্রয়োগের সুবিধার্থে এবং মামলা জট নিরসনের নিমিত্ত বিচার বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে পৃথক আদালত স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, বিচারক সংকট, এজলাসের অপ্রতুলতা, জনবলের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে মামলা জট। এই অবস্থার পরিত্রাণের জন্য আইনজ্ঞরা বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি পৃথক আদালত স্থাপনের।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রস্তাব আমলে নিয়ে রোড ম্যাপে পৃথক দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরই মধ্যে সোমবার দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণে দেওয়ানি-ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে পৃথক আদালত স্থাপন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃজনের পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত একটি পত্র আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২১শে সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। রোডম্যাপে বলা হয়, দেওয়ানি ও ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে পৃথক আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন। যুগ্ম জেলা জজ হতে জেলা জজ পর্যন্ত এ সংস্কার আনতে হবে। তারই অংশ হিসেবে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি এবং সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে জেলা আদালত ও সেশন’স ডিভিশন পৃথককরণ এবং সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃজনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কর্তৃক একটি পত্র আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, দেশের অধস্তন আদালতসমূহে বর্তমানে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ানি আপিল, দেওয়ানি রিভিশন, ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষ আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ফলে বিচারকের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। মামলা জট ও দীর্ঘসূত্রতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য পৃথক এখতিয়ার প্রয়োগের সুবিধার্থে এবং মামলা জট নিরসনের নিমিত্ত বিচার বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে পৃথক আদালত স্থাপন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃজন করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু মানবজমিনকে বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি পৃথক আদালত করা হলে মামলা জট অনেকাংশে কমে যাবে। মেট্রোপলিটনের বাইরের আদালতগুলোতে একই বিচারক দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করে। যুগ্ম জেলা জজ থেকে জেলা জজ একই ব্যক্তি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা সপ্তাহের সাত দিন ভাগ করে পরিচালনা করতে হয়। এতে মামলা নিষ্পত্তির কার্যক্রমে গতি হারায়। এক বিচারক বলেন, সপ্তাহের সাত দিন ভাগ করে দেওয়ানি- ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করতে হয়। সবাই কিন্তু সব মামলা পরিচালনায় দক্ষ থাকে না। এক ধরনের মামলা পরিচালনা করলে কাজে গতি থাকে। এতে মামলা নিষ্পত্তিও সহজ হয়।