শেষের পাতা
সিলেটে দুদকের তদন্তে কাঠগড়ায় ডা. মুর্শেদ চৌধুরী
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবারযাত্রা শুরুর প্রাক্কালে অনিয়ম ও দুর্নীতির কবলে পড়েছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম ভিসি প্রফেসর ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরীর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে হোঁচট খেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অনুমতি না নিয়েই নিয়োগ দিয়েছেন। এর সংখ্যা হবে ১৪১ জনের মতো। তার নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে ২৮ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না আড়াইশ’ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তারা আন্দোলনে রয়েছে। এই অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রোববার সিলেটের আদালতে ডা. মুর্শেদ সহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন ছাড়াই চক্রের মধ্যে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন ইমন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বর্ণিত ৫৮ আসামির মধ্যে ডা. মুর্শেদ, নাঈমুল হক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। সিলেটের ওসি (প্রসিকিউশন) জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত শেষে দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী ছাড়াও অভিযোগপত্রে সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নাঈমুল হক চৌধুরী (মঈনুল হক চৌধুরী), উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ফাহিমা খানম চৌধুরী, সহকারী রেজিস্ট্রার অঞ্জন দেবনাথ, সহকারী কলেজ পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গোলাম সরোয়ার, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিলাল আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (বাজেট) শমসের রাসেল, পাবলিক রিলেশন অফিসার গাজী মো. ফারাজ, প্রকিউরমেন্ট অফিসার আব্দুল মুনিম, সেকশন অফিসার যথাক্রমে রিংকু দাস, আতিক শাহরিয়ার ধ্রুব, খালেদা চৌধুরী, আশরাফুল ইসলাম, জান্নাতুল ফেরদৌসী, চৌধুরী রোম্মান আহমদ, সাজু ইবনে হান্নান খান, বেলাল উদ্দিন, লোকমান আহমেদ, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা চৌধুরী জুলফিকার খালেদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যথাক্রমে হালিমা বেগম, সুরঞ্জিত চন্দ্র তালুকদার, তৌফিক মিয়া, রহমত আলী, এনি সরকার, দেবশ্রী রানী দাস, বিপুল কান্তি দাস, আব্দুল আজিজ, মুহিতুর রহমান, আলী ফজল মো. কাওছার, নাহিমা বেগম, আব্দুল মজিদ, হুমায়ুন কবির জুয়েল, নাজমুস শামস তুষার, তানভীর আহমদ, ইয়ামিন হোসেন, রাখা রানী রায় শর্মী, তারেক মো. রেদোয়ান, অনিন্দিতা বিশ্বাস, রাজীব বৈদ্য, সাবেক সহকারী পরিচালক আব্দুস সবুর, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যথাক্রমে মবরুর মিয়া, তামান্না ফিরোজী, দিব্য জ্যোতি সী, মিস আলেয়া নেছা জনি, মুমিনুর রহমান, রবিউল আলম বকুল, কয়েছ আহমদ, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক যথাক্রমে লুৎফা বেগম, রুহুল আমিন, জাহিদ হোসেন, রোমানা সুলতানা, আনিছুর রহমান, রাফি ইব্রাহিম, আব্দুস সাত্তার, মোছা. সুলতানা বেগম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে দুর্নীতির চিত্র বর্ণনা করে বলা হয়- সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ২২০ জনকে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে অনধিক ছয় মাসের জন্য এডহক নিয়োগ দেয়া হয়। পরবর্তীতে নিয়োগের মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। নির্ধারিত সময় ১ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিয়মিত না করে পুনরায় এডহকে পাঁচবার পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২৩৯ জন। ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত পদ আছে ১১২টি।
অনুমোদিত পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৯৮ জনকে এবং ইউজিসি থেকে তাদের বেতন-ভাতা জনতা ব্যাংক লি. এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অপরপক্ষে অতিরিক্ত ১৪১টি পদে নিয়োগে ইউজিসির অনুমোদন নেয়া হয়নি এবং তাদের বেতন-ভাতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান থেকে প্রাপ্ত। অতিরিক্ত ১৪১ জন নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসি থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। সাবেক ভিসি ডা. মুর্শেদ ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নাঈমুল পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অতিরিক্ত ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত যোগ্যতা বিধিমালা-২০২০ অনুযায়ী যথাযথ যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে বাছাই করার কথা থাকলেও তৎকালীন ভিসি ডা. মুর্শেদ বয়সের দিক থেকে অযোগ্য ৪৬ প্রার্থীকে নিয়োগ দেন। ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্ট কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালের ১৬ই নভেম্বর ইউজিসির তদন্তে নিয়োগ বাণিজ্যের সত্যতা পাওয়া যায়।
পাঠকের মতামত
কী আর কমু? কওনের কিছু নাই
Dr. Murshid Chowdhury is a well-known cheater, and he has to be punished.
এগুলো দূর্নিতী ও অনিয়ম শুধু শিক্ষিত সমাজের কর্ণধারদের কথা শুনার ছিল না।তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা করে হাসপাতালের শান্তি ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।