বিশ্বজমিন
শি জিনপিংকে স্বৈরশাসক বলায় জার্মানির ওপর ভীষণ চটেছে চীন
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:৪৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘স্বৈরশাসক’ বলায় জার্মানির ওপর তীব্র ক্ষোভ দেখিয়েছে চীন। জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে দেশটির গণমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শি জিনপিংকে স্বৈরশাসক বলে আখ্যায়িত করেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বায়েরবক। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাকে একটি প্রশ্ন করা হলে এর জবাবে তিনি বলেন, পুতিন যদি এই যুদ্ধে জিতেন তাহলে বিশ্বের অন্য স্বৈরশাসক যেমন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে তা কি সঙ্কেত পাঠাবে! সরাসরি এভাবে চীনা প্রেসিডেন্টকে স্বৈরশাসক বলায় জার্মান রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া ফ্লোরকে ডেকে এনে চরম প্রতিবাদ জানিয়েছে বেইজিং। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিষয়টি সিএনএনের কাছে নিশ্চিত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে তারা ‘ভয়াবহ অসন্তুষ্ট’। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, জার্মানির করা মন্তব্য অত্যন্ত অযৌক্তিক। এই মন্তব্য চীনের রাজনৈতিক মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করে এবং এটি একটি প্রকাশ্য রাজনৈতিক উস্কানি।
শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীনের অনেক আচরণ পশ্চিমা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আসছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরতায় এখনো বড় কোনো পরিবর্তন না ঘটলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যথেষ্ট শীতল রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর চীন যেভাবে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরো পাকাপোক্ত করেছে, তা বড় ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠেছে। ফলে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভুলে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নেতা প্রকাশ্যে শি জিনপিংয়ের কড়া সমালোচনা করছেন।
চীনের সঙ্গে জার্মানির রাজনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রতি কিছুটা শীতল হয়ে পড়ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে জার্মান সরকার প্রথমবারের মতো চীনের প্রতি কৌশলগত অবস্থান সংক্রান্ত এক নথি প্রকাশ করেছে। তাতে চীনের উপর নির্ভরতা কমানোর ডাক দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করে বরং ঝুঁকি এড়ানোর প্রতি জোর দেয়া হয়। নিজস্ব মূল্যবোধ ও স্বার্থ ক্ষুণ্ন না করে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কথাও বলা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানির এমন অবস্থানের সমালোচনা করেছিল।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস চীনা প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবকের মন্তব্য সম্পর্কে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানান নি। এক সরকারি মুখপাত্র বলেন, নীতিগতভাবে জার্মান চ্যান্সেলর তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের মন্তব্যের মূল্যায়ন করেন না। তিনি আরো বলেন, মনে রাখতে হবে যে চীন এক দলীয় কমিউনিস্ট শাসনের আওতায় রয়েছে। গণতন্ত্র সম্পর্কে জার্মানির ধারণার সঙ্গে সেই ব্যবস্থার কোনো মিল নেই। তবে জার্মান চ্যান্সেলরও বেয়ারবকের সাম্প্রতিক মন্তব্যের সঙ্গে একমত কিনা, সে বিষয়ে জার্মান সরকারি মুখপাত্র কিছু বলেন নি।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও শি জিনপিংকে স্বৈরশাসক বলে বর্ণনা করেছিলেন। সে সময়ও কঠিন প্রতিবাদ জানিয়ে বেইজিং বলে, বাইডেনের এমন বক্তব্য গুরুতর কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন।