অনলাইন
৪৮ বছর ধরে সংগ্ৰাম করে সন্তানের দেহাবশেষ ফিরে পেলেন ক্যান্সার আক্রান্ত মা
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ বছর আগে) ১৮ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

৪৮ বছর পরে গুরুতর অসুস্থ মায়ের কাছে তার শিশু সন্তানের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেয়া হলো। লিডিয়া রিডের ছেলে গ্যারি ১৯৭৫ সালে মারা যায় যখন তার বয়স ছিল মাত্র এক সপ্তাহ। মা জানতেন তার সন্তানের দেহকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে - পাঁচ বছর আগে এডিনবার্গে বসবাসকারী লিডিয়ার সন্তানের দেহ কফিন থেকে বের করা হয়েছিল এবং দেখা গেছে এর ভিতরে কোনো মানুষের দেহাবশেষ নেই। আসলে এডিনবার্গ রয়্যাল ইনফার্মারিতে শিশুটির অঙ্গ এবং শরীরের অন্যান্য অংশ সংরক্ষিত ছিলো। এখন সেসব তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লিডিয়ার শরীরে দানা বেঁধেছে অন্ত্রের ক্যান্সার। শেষ পর্যন্ত ছেলের দেহাবশেষ হাতে পাবার পর সন্তানের সম্মানজনক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করতে পেরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন লিডিয়া। তিনি বিবিসি স্কটল্যান্ডকে বলেছেন: ‘সন্তান হারানোর আঘাতটি ভয়ঙ্কর ছিল। এখন আমি নিশ্চিন্ত অন্তত মৃত্যুর আগে ছেলেকে শান্তিতে সমাধিস্থ করতে পারবো।' স্কটল্যান্ডের হাসপাতালগুলি কীভাবে গবেষণার জন্য মৃত শিশুদের দেহের অংশগুলিকে সংরক্ষণ করে রেখেছে তা প্রকাশ করার জন্য লিডিয়া একটি প্রচারাভিযানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৭০ থেকে ২০০০সালের মধ্যে প্রায় ৬,০০০টি অঙ্গ এবং টিস্যু স্কটিশ হাসপাতাল দ্বারা রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে অনেকগুলি শিশুদের ছিল। ১৯৯৯ সালে লিভারপুলের অ্যাল্ডার হে হাসপাতালে অঙ্গ সংরক্ষণ রাখার বিষয়ে একটি জনসাধারণের তদন্তের পরে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। লিডিয়া বলেছিলেন যে যখন তিনি তার ছেলের মৃত্যুর কয়েকদিন পরে তার মৃতদেহ দেখতে চেয়েছিলেন তখন তাকে একটি ভিন্ন শিশুর দেহ দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে তার অনুমতি ছাড়াই সন্তানের অঙ্গগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং এডিনবার্গ রয়্যাল ইনফার্মারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে গ্যারির কফিনটি বের করার জন্য আদালত বিশেষ নির্দেশ দেয়। কফিনে একটি শাল, একটি টুপিসহ অন্যান্য সামগ্রী থাকলেও মানুষের দেহের কোনো অবশিষ্টাংশ ছিল না। একজন ফরেনসিক নৃতাত্ত্বিক জানিয়েছেন কফিনে কোনো মানুষের দেহাবশেষ ছিল না। ২০২২ সালে লিডিয়া অনশন করেন এবং এডিনবার্গের ক্রাউন অফিসের বাইরে তার ছেলের সাথে কী ঘটেছে জানতে ক্যাম্প করেন। সন্তানের দেহাবশেষ ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত এই অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানান লিডিয়া। তাঁর সন্তান গ্যারি রিসাস রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন গর্ভবতী নারীর রক্তে থাকা অ্যান্টিবডিগুলি তার শিশুর রক্তের কোষগুলিকে ধ্বংস করে। লিডিয়ার আরও দুটি পুত্র ছিল,তাদের একজন স্টিভেনও একই সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলো, কিন্তু তার দেহে রক্ত সঞ্চালন করার পর সে বেঁচে যায়। কিন্তু ডাক্তাররা গ্যারির উপর একটি 'পরীক্ষামূলক পদ্ধতি' চালিয়েছিলেন যার ফলে তার মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। লিডিয়ার আরেক পুত্র ব্রুস ২০০৬ সালে ক্যান্সারে মারা যায়। সন্তানহারা মা আশা করেন স্টিভেন তার মৃত্যুর পরে তার অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে যাবেন। ক্রাউন অফিস এবং প্রকিউরেটর ফিসকাল সার্ভিস (সিওপিএফএস) এর ডেপুটি ক্রাউন এজেন্ট লিন্ডসে মিলার বিবিসিকে বলেছেন যে এই মামলায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু অবৈধ অঙ্গ আটকে রাখা সংক্রান্ত কোনো অপরাধ বা প্রমাণ মেলেনি।
সূত্র : metro.co.uk