অনলাইন
আপা, তখনই খবরটা এলো
শামীমুল হক
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার
সুপ্রিয় হাসু আপা, দুঃখে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। বেঁচে থাকতে এমন খবর পাবো কখনো ভাবিনি। বরং ভেবেছিলাম যতদিন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস থাকবে ততদিন বাংলাদেশের সরকার প্রধান থাকবেন আপনি। নিজ হাতে সেই বন্দোবস্ত নিজেই করেছিলেন সংবিধানে। সেই বন্দোবস্তের মাধ্যমে তিনটি নির্বাচনও করলেন। আর নির্বাচনের পর হাসিমাখা মুখে টিভি পর্দায় এসে বলেছেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। এ দেশে কোনোদিন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যেন না আসতে পারে। এসব শুনে আপনার চেলাচামুণ্ডারা হাততালি দিতো। এতে আপনি গদগদ হতেন। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল বুঝলাম না। কোটা বিরোধী আন্দোলন দমাতে গিয়ে আপনার সব বাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। দেশে হয়ে গেল বিপ্লব। আপনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। এ লজ্জা রাখি কোথায় আপা। বুধবার এ লেখা যখন লিখতে বসি তখনই খবরটা এলো। আদালত অবমাননা মামলায় আপনার ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে সুখের খবর হলো এ কারাদণ্ড বিনাশ্রম। এ খবর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঠেকলো। আপা, ভাবা যায়Ñ যে দেশ আপনার বাবা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে। যে দেশের একক মালিক আপনার পরিবার। এসব কথা বুক ফুলিয়ে বিভিন্ন সভায় আপনি নিজেই বলতেন। সে দেশে আপনার কারাদণ্ড হবে! এটা বিশ্বাস্য। বিস্তারিত জেনে দেখলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই সাজা দিয়েছেন। আপনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো মামলায় সাজা হলো। তাই না? গাইবান্ধার ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে আপনার টেলিফোন আলাপ ভাইরাল হয়েছে। ভারতে বসে ওই অডিও টেলিফোন আলাপে আপনাকে বলতে শোনা যায় আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি। ওই আলাপ ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার এই মামলা হয়। পরে ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা জানায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩০শে এপ্রিল শেখ হাসিনা ও শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর। এ মামলায় ছয় মাসের জেল হয়েছে আপনার। সঙ্গে শাকিলেরও।
সে যাই হোক। আপনার প্রায় ষোল বছরের ক্ষমতায় কিনা করেছেন আপনি? যত অপকর্ম করেছেন তার হিসাব করতে গেলে বাকি জীবনেও শেষ হবে না। কিন্তু, আপনি দেশত্যাগী হলেন। আপনার গোষ্ঠী দেশছাড়া হলো। আপনার কর্মের কারণে আপনার বোন ঝি বৃটেনের মন্ত্রিত্ব হারালেন। তারপরও আপনি বুক ফুলিয়ে ভারত থেকে আপনার লোকজনকে উস্কে দিচ্ছেন। আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, দেশের পঞ্চাশ ভাগ জনগণ আওয়ামী লীগের সমর্থক। অথচ গত তিনটি নির্বাচনে পাঁচ ভাগ ভোটও দিতে আসেনি কেউ। আর ওই নির্বাচনে জনসমর্থনের সঠিক তথ্যও বেরিয়ে আসেনি। হ্যাঁ, আপা মুখ যখন আছে কতো কিছুই বলা যায়। বলতে পারবেন। এই যে আপনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক পেইজে জুলাই বিপ্লবকে দাঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যে বিপ্লবে আপনাকে উড়ে যেতে হয়েছে ভিনদেশে। সেই বিপ্লবকে দাঙ্গা বলে কোন হিসাবে। এ মাথা নিয়েই সজীব ওয়াজেদ জয় আপনার উপদেষ্টা ছিলেন। এখন বুঝছি কেন আপনাকে দেশ ছাড়তে হলো নির্লজ্জভাবে। আচ্ছা একটু দেখে আসি জয় কি লিখেছে? সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ভুল বুঝতে পারা দুর্বলতা নয়, বরং সেটাই সাহসিকতার শুরু। আসুন, একসঙ্গে দেশ ও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াই। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হওয়া ‘জুলাই দাঙ্গা’ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। বিদেশি রাষ্ট্রের অর্থায়নে আর উগ্রবাদী অপশক্তির মদতে সংঘটিত সেই দাঙ্গার পেছনে অনেকেই যুক্ত হয়েছিলেন- কেউ সচেতনভাবে, কেউবা না বুঝে বিভ্রান্ত হয়ে। পেশাজীবী সমাজের বহু সদস্য, যারা বছরের পর বছর দেশের জন্য কাজ করেছেন, সেই সময় ভুল তথ্য, গুজব ও প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে এই ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিলেন। আজ, মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে অনেকেই বুঝতে পারছেন- তারা কী ভয়াবহ ভুলের অংশ ছিলেন। দেশের স্বাধীন, গণতন্ত্র ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে, একটি স্বৈরাচারী, জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন গোষ্ঠীর হাতে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায়, গণমাধ্যমে, কিংবা ব্যক্তিগতভাবে যাদের হতাশা, অনুশোচনা আর নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখছি- তাদের প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই, নেই প্রতিশোধের মনোভাব। আওয়ামী লীগ কখনোই প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে, আমরা সব সময় ক্ষমার, সহমর্মিতার, আর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে চলেছি। আপনারা যারা ভুল বুঝেছেন, এখন যদি অন্তর থেকে উপলব্ধি করে থাকেন- তাহলে আসুন, দেশের স্বার্থে আবার এক হই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করি। দল-মত-পেশা-অভিপ্রায় ভুলে গিয়ে, আজ সময় এসেছে বাংলাদেশকে এই স্বৈরশাসকের কবল থেকে রক্ষা করার। দেরিতে হলেও অবশেষে আপনাদের বোধোদয়ের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এখন সময় দেশের পক্ষে কাজ করার। এখন সময় জাতির পাশে দাঁড়ানোর।
আচ্ছা হাসু আপা, জয় এসব কি লিখেছে? জয় কি জানেন দেশের নিরানব্বই ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগকে এখন হিসাব করে না। তাদের অপকর্মের ফিরিস্তি সবার মনে ভয় জাগিয়ে রেখেছে। এ ভয় কোনো তাবিজ কবজে যাবে না। কোনো ডাক্তারের কাছে এই ভয় তাড়ানোর ওষুধ নেই। জয়ের কথায় আপনারা যারা ভুল বুঝেছেন? কিসের ভুল। জয়, আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জিত, দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী না হয়ে বরং বলছেন, আমাদের প্রতিশোধের মনোভাব নেই। এর মানে কি? এখনো ভাবছেনÑ আবার ক্ষমতায় এসে প্রতিশোধ নেবেন? দেশের মানুষকে কচুকাটা করবেন? এসব জয়কে ভুলে যেতে বলুন আপা। আর আপনাকে কি বলবো? আপনি তো প্রতিনিয়ত দেশের মানুষের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের উস্কে দিচ্ছেন দেশের জনগণের বিরুদ্ধে। কিন্তু আপনার কথা কে শুনছে? এখন তো আপনি বাংলাদেশের কেউ না। ভিনদেশে আশ্রিত এক রিফিউজি। ওদিকে বাংলাদেশের দণ্ডপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি। তয় আপা, আর বেশিদিন লাগবে না। যেভাবে মামলার গতি এগুচ্ছে শিগগিরই হয়তো গণহত্যার জন্য আপনার সর্বোচ্চ শাস্তিও শুনতে পারে দেশবাসী।
হাসু আপা, সেই দুঃসহ জুলাই বিপ্লব মাস চলছে। এ মাসেই কোটা বিরোধী আন্দোলন দিন দিন চাঙ্গা হয়। এ মাসেই সমন্বয়কদের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়। এ মাসেই আন্দোলনকারীদের আপনি রাজাকার ট্যাগ লাগিয়ে দেন। কেন যে সেদিন সংবাদ সম্মেলন করতে গেলেন? বুঝি না। সংবাদ সম্মেলন না হলে তো আপনার মুখ দিয়ে রাজাকার শব্দটি বেরুতো না। এই একটি মাত্র শব্দ আপনার সিংহাসন নাড়িয়ে দেয়। অথচ যে শব্দ দিয়ে আপনি এতদিন রাজনীতি করে গেছেন। বিএনপি-জামায়াতকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন। কতো সাধারণ মানুষকে শিবির ট্যাগ লাগিয়ে জেলে পুড়েছেন। কতো যে জঙ্গি নাটক সাজিয়েছেন। চাকরি দেয়ার সময় রক্তের গ্রুপ চেক করেছেন স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে। রক্তের গ্রুপ এ (আওয়ামী লীগ) নাকি বি (বিএনপি)। চাকরি প্রার্থীর পরিবারই নয়, তার চৌদ্দগোষ্ঠীর রক্তের গ্রুপ যাচাই করা হয়েছে। এরপর চাকরি হয়েছে। তবে ঘুষ তো লেগেছেই। ঘুষ ছাড়া চাকরি হয়েছে এমন নজির খুবই কম। আর যারা বি গ্রুপের রক্ত বহন করেছে তারা কেউ ফুটপাথে হকারি করেছে। কেউবা রিকশা চালিয়েছে। কেউ সিএনজি, আবার কেউ পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার টেনে নিয়েছে। কতো বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী যে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি তার ইয়াত্তা নেই। তারপরও জয় তার পোস্টে লিখেছে আপনারা যারা ভুল বুঝতে পেরেছেন। আরে লাজ শরমের মাথা খেয়েছে নাকি? যেখানে দেশবাসীর কাছে খোলা চিঠির মাধ্যমে বিগত ষোল বছরের ভুল ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাইবে, দুঃখ প্রকাশ করবেÑ সেখানে তার এমন পোস্ট দেখে দেশবাসী হতবাক। এটা লিখলো সজীব ওয়াজেদ জয়। আপনাকে যে বলবো জয়কে বুঝাতে তাও পারছি না। কারণ আপনিও তো তারচেয়ে এগিয়ে। আপনার দলের পলাতক সাধারণ সম্পাদক তো আরও এক কাঠি এগিয়ে। তার চোখে কোনো ভুল ধরা পড়ে না।
প্রিয় হাসু আপা, মনে পড়ে কি? ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের কাছে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। একটি বার সুযোগ চেয়েছিলেন। জনগণ সে সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু ষোল বছরে আপনার যে অর্জন তাতে এখন আপনাকে সুযোগ দিতে শতবার ভাববে। এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। তারপরও বলবো-এখনো সময় আছে, জনগণের কাছে ক্ষমা চান। জনগণ যদি ক্ষমা করে একবার না একবার আওয়ামী লীগ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। মনে রাখবেন, হম্বিতম্বি দিয়ে কিছু করা যায় না। সাময়িক হয়তো সময়কে টেনে নেয়া যায়। কিন্তু শেষটা ভালো হয় না। যার সাক্ষী আপনি নিজেই। আজ এ পর্যন্তই। আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হউক।
(জনতার চোখ থেকে)
পাঠকের মতামত
হাসিনার মত নিকৃষ্ট সাইকোপ্যাথ, লজ্জাহীন, গনহত্যা-কারীর ক্ষমা নেই
বার বার হাসু আপারে ক্ষমার কথা না বলে ৭১’ এর রাজাকার ৮০, ৯০ এর স্বৈরাচারকে ক্ষমা চাইতে বলো। যদি ৭১’ এর রাজাকার বা ৮০, ৯০ এর স্বৈরাচার না হয়ে থাকো।
ওর ক্ষমা চাইতে চাইতে আর জনগণ ক্ষমা করতে করতে ওর জীবন বাতি জয় বাংলা হয়ে যাবে.....!!!
দীর্ঘ নিবন্ধে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা ও প্রজ্ঞাপূর্ন নাগরিকের দায়িত্ব পালিত হলেও এ সব তিনি এবং তার পরিবারের নিকট জমিদারী রক্ষার দাঙ্গা হাংগামা ছাড়া আর কি হতে পারে। যুগপৎভাবে তার এ সকল নিষ্ঠুরতায় যারা অন্ধ সমর্থন যুগিয়ে দেশের সর্বনাশ করেছে তাদের নিয়েও লিখুন ।
আশা করি হাসুবু এই চিঠিটা পড়বেন ;)
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে. লেখকের এই বাক্য নিয়ে প্রবল অবজেকশন আছে।
মন্তব্যের অংশে এখনো হাসিনার দোসরদের দেখা যাচ্ছে। DIDAR সাহেব, জনতা তোমাদের খুজে বের করবে।
২০০৮ সালের নির্বাচন বন্দোবস্তের নির্বাচন ছিল।
লেখাটায় কোন মিথ্যার আশ্রয় নেই বলা যায়। আওয়ামীলীগের জন্য যথার্থ পরামর্শ দিয়েছেন, যদি তারা বুঝতে পারে।
৯৬ এর পরে ২০০৮ সালেও নির্বাচনে জিতেছিল এটা ভুলে গেছেন নাকি