ঢাকা, ১০ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দরজা বন্ধ, সুযোগ নিচ্ছে চীন

মানবজমিন ডিজিটাল

(৪ ঘন্টা আগে) ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ৭:৪৭ অপরাহ্ন

mzamin

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে নিজের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং অভিবাসনের উপর ক্র্যাকডাউনের মধ্যে পর্যটকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই সুযোগে তার ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, (যে  দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে আপেক্ষিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলো) তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাগুলো অভূতপূর্ব মাত্রায় শিথিল করেছে। ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে, চীন অন্তর্মুখী পর্যটনকে উত্সাহিত করার জন্য একটি বিস্তৃত প্রচারণার অংশ হিসাবে ৭৫টি দেশকে ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে চলেছে। চীনের জাতীয় অভিবাসন তথ্য অনুসারে, গত বছর ২০ মিলিয়নেরও বেশি বিদেশী ভিসা ছাড়াই চীনে গিয়েছিলেন, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। সাংহাই এই বছরের প্রথমার্ধে ২.৬ মিলিয়ন বিদেশীদের স্বাগত জানিয়েছে, যার প্রায় অর্ধেক ভিসা-মুক্ত এন্ট্রি ছিল। এই  বছর বিদেশিদের আগমনের প্রবণতা ৪৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। 

"জিরো-কোভিড" নীতির পর চীন বিশ্বের থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু ২০২৩ সালের গোড়ার দিকে দেশের সীমানা পুনরায় খোলার পর থেকে আরও বেশি পর্যটকদের স্বাগত জানাতে শুরু করেছে চীন। এটি এমন এক সময় যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব মঞ্চ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের আনাগোনা সীমাবদ্ধ করেছে, বাকি বিশ্বের উপর সুপরিকল্পিত শুল্ক আরোপ করেছে এবং ইউএসএআইডি বন্ধ করেছে। অভিবাসন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর কড়াকড়ির জেরে অনেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ এড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন চীন, বিশেষত বাণিজ্য আলোচনার মাধ্যমে। 

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট অফ সেসঅ্যাপ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ফেলো লিন জিং বলছেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক সক্ষমতা, মিত্রদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি এবং সংকট ব্যবস্থাপনায় তার প্রভাব প্রদর্শন করেছে। বিশ্বজুড়ে শান্তি চুক্তিতে সহায়ক ভূমিকা নিয়ে, কখনও কখনও বলপ্রয়োগের হুমকি দিয়ে  ট্রাম্প তার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। কিন্তু চীন সম্পূর্ণ অন্যভাবে নিজের বৈশ্বিক ভূমিকা পালন করে। ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা এবং জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক আদেশের প্রতি তার নিরন্তর সমর্থন প্রদর্শন করে চলেছে চীন'। মে মাসে, চীনা রাষ্ট্রদূত জি ফেং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং হংকং থেকে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকারীদের গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি দূতাবাসে বলেছিলেন -'এটি  চীন-মার্কিন সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। আমরা সমস্ত আমেরিকান বন্ধুদের চীনে ভ্রমণ করতে, কেনাকাটা করতে এবং চীনা আধুনিকায়নে অংশ নিতে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। আসুন এবং নিজের চোখে দেশটি দেখুন।'

চীনের নতুন ভিসা-মুক্ত নিয়ম কি?

চীন তার ভিসা-মুক্ত প্রবেশ নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারণ করেছে। যার ফলে ৭৪টি দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ৩০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবেন চীনে। অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে পুনরুজ্জীবিত এবং অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপের ফলে বিদেশী পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে, বেইজিং ধারাবাহিকভাবে নীতিটি সম্প্রসারণ করেছে। ইউরোপ, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ ভ্রমণকারীদের জন্য ৩০ দিন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন,জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া সহ বেশিরভাগ এশীয় দেশ এবং প্রায় প্রতিটি ইউরোপীয় দেশ থেকে ভিসা-মুক্ত প্রবেশ চালু করেছে। পাঁচটি লাতিন আমেরিকার দেশ-আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, পেরু, উরুগুয়ে-এবং উজবেকিস্তানের নাগরিকদের জুন মাসে এই স্কিমে যুক্ত করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ-বাহরাইন, কুয়েত, ওমান এবং সৌদি আরব-কেও গত মাসে ভিসামুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজারবাইজান ১৬ জুলাই থেকে এই তালিকায় সম্পৃক্ত হবে, তখন মোট দেশের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫। ২০২৪ সালে দুই কোটিরও বেশি মানুষ ভিসা ছাড়াই চীনে প্রবেশ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি এবং সমস্ত বিদেশী আগমনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। চীন তার ট্রানজিট নীতিও প্রসারিত করেছে যা ৫৫টি দেশের ভ্রমণকারীদের ১০ দিনের জন্য ভিসা ছাড়াই চীনে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়। ট্রানজিট নীতিতে ১০টি দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেগুলো ভিসা-মুক্ত স্কিমের অংশ নয়: কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, ইন্দোনেশিয়া, লিথুয়ানিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র। চীন আরো দেশী এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য জিনজিয়াং-উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে রয়েছে, যা মানবাধিকারের উদ্বেগের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা ২০৩০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বার্ষিক কমপক্ষে ৪০০ মিলিয়ন পর্যটকদের  আনার লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ভ্রমণে পতন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বিধি কঠোর করার পটভূমিতে চীন পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর  উপর তার ক্র্যাকডাউনে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের লক্ষ্যবস্তু করেছেন। তার শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক ছাত্রদের নথিভুক্ত করার ক্ষমতা অপসারণের প্রচেষ্টা। সেইসঙ্গে দেশ থেকে অপসারণের জন্য বিদেশী ছাত্রদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং অনুসন্ধান ছাড়াই নীরবে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভিসা প্রত্যাহার করা। এছাড়াও তিনি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকারীদের স্ক্রিনিং- এর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে চীনের আবেদনকারীদের তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোকে যাচাই করার জন্য "পাবলিক" করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার ২০২৪ সালের প্রচারণার সময়, ট্রাম্প মুসলিম দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের উপর তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। জুন মাসে তিনি ১২ টি দেশের নাগরিকদের উপর নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন এবং আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ট্রাম্প ৩৬ টি দেশকে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে। চীন সহ বেশ কয়েকটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের বিষয়ে পরামর্শ জারি করেছে। 

চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির  কারণে সেদেশে  ভ্রমণের আগে  ঝুঁকিগুলো সম্পূর্ণরূপে মূল্যায়ন করার জন্য তার নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে বেইজিং। যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি সহ কিছু ইউরোপীয় দেশ মার্কিন সীমান্তে একাধিক ইউরোপীয় ভ্রমণকারীকে কয়েক সপ্তাহ ধরে আটক করার পরে সতর্কতা জারি করেছে। ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস সহ অন্যরা, ট্রান্সজেন্ডার এবং নন-বাইনারী ভ্রমণকারীদের আমেরিকা ভ্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। কারণ ট্রাম্প শুধুমাত্র পুরুষ এবং নারী শুধুমাত্র দুটি লিঙ্গকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। কানাডাও তার নাগরিকদের সতর্ক করেছে। ট্রাম্প বারবার কানাডাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১ তম অঙ্গ রাজ্যে পরিণত করার জন্য হুমকি দেওয়ার পরে কিছু কানাডিয়ানও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বয়কট শুরু করেছে। 

ব্লুমবার্গের রিপোর্ট মোতাবেক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী ভ্রমণ এক বছর আগের তুলনায় এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২.৫% কমেছে। ট্রাম্প কানাডা, চীন এবং মেক্সিকোতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা করার পরে মার্চ মাসে এই পরিসংখ্যান সবচেয়ে বেশি ১০% হ্রাস পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল অনুমান করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বছর পর্যটন থেকে প্রাপ্ত ১২.৫ বিলিয়ন ডলার হারাবে, যদিও কেউ কেউ বলছেন ঘাটতির পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলারও হতে পারে।

সূত্র : টাইম

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status