ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

১৫ বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যা জানা গেলো

স্টাফ রিপোর্টার

(৮ ঘন্টা আগে) ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার, ১২:৪৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৮:২১ অপরাহ্ন

mzamin

চৌধুরী আলম।

চৌধুরী আলম। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক। ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এই নেতা নিখোঁজ হন ২০১০ সালের ২৫ জুন। আজও মেলেনি সন্ধান।

চৌধুরী আলমের গুমের ব্যাপারে ২০১০ সালে ১ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেছিলেন তার বড় ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী হিমু। তবে এখনো কোনো সুরাহ হয়নি তার গুমের ব্যাপারে।

এ নিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর সার্চলাইটে ‘চৌধুরী আলম; অন্তর্ধান রহস্য’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সেখানে উঠে এসেছে নানা তথ্য।

প্রতিবেদনটি পাঠকদের জন্য এটি তুলে ধরা হলো-

রাজধানীর ইন্দিরা রোডের গার্মেন্টস গলি থেকে দেড় দশক আগে অপহরণের শিকার হন চৌধুরী আলম। জনশ্রুতি আছে, সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন তিনি। কী ঘটেছিল চৌধুরী আলমের ভাগ্যে? সার্চলাইটের অনুসন্ধানে তা তুলে ধরা হয়।

গার্মেন্টস গলির ভবনে থাকতেন উম্মে জাহান আরজু। যাকে বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন চৌধুরী আলম। পরে তিনি বাসা বদল করেছেন। আরজু বলেন, ‘আমি যে একজন আছি, এটা অনেকেই জানত-ই না। এখনো জানে না। এদিকে আমি তার পরিচয়টাও কোথাও দেই না।’

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দ্বিতীয় বিয়ে এবং বয়সের বিস্তর ফারাক ও রাজনৈতিক ইমেজ সংকটে পড়তে পারে এজন্য তাদের বিয়ের কথা গোপন রাখা হয়।

আরজু বলেন, ‘কে জানে, উনি হঠাৎ করে গুম হয়ে যাবেন। আমি এখন কী বলবো। আমার জন্য আমার ফ্যামিলি ধ্বংস।’

তবে সংসার, সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিদেশ ভ্রমণ সবই চলছিল। বাঁধ সাধে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। ২০০৯ সালের পর থেকে চৌধুরী আলমকে কয়েক দফা অপহরণের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। সবশেষ ২০১০ সালের ২৫ জুন দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় ফেরার পথে তাকে তুলে নেয়া হয়েছিল।

আরজু জানান, আসরের নামাজের আজান দেয়। সে সময় উঠে নামাজ পড়ে বের হয়ে যায়। আর ফিরে আসে নাই।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নজরদারি এড়াতে মাঝেমধ্যে অন্যের গাড়ি ব্যবহার করতেন চৌধুরী আলম। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। অপহরণের দিন উম্মে জাহান আরজুর বড় বোন মমতাজ বেগমের গাড়িটি নিয়েছিলেন তিনি।

আরজু বলেন, ‘ড্রাইভার অসীম বাসায় এসে বলে-ম্যাডাম, স্যারকে ধরে নিয়ে গেছে। কে বা কারা জানি না। গাড়িসহ ধরে নিয়ে গেছে। বলার পর আমি (আরজু) তৎক্ষণাৎ উনার ড্রাইভার জসিমকে জানাই যে, এমন ঘটনা। আপনার বসকে নাকি ধরে নিয়ে গেছে। সম্ভবত উনি অ্যারেস্ট হইছেন। এটা আপনি উনাদের বাসায় জানান।’

কার বিকল্প হিসেবে এসেছিলেন? জবাবে আরজু বলেন, ‘মজিবুর রহমান ছিলেন আমাদের রেগুলার ড্রাইভার। তার বিপরীতে ছিলেন। প্রথমদিন আসছে। প্রথমদিনেই এই ঘটনা। তারপর ওই যে ছেলেটাকে আমি দেখলাম, যে বলল-ম্যাডাম, ম্যাডাম স্যারকে ধরে নিয়ে গেছে। এটুকুই।’

চৌধুরী আলম অপহরণ হয়েছিলেন, সেই ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালক অসীম চন্দ্র ভৌমিক।

কুমিল্লার বড়ুরার যে ঠিকানা অসীম হলফ নামায় উল্লেখ করেছিলেন, সেটি তার মামার বাড়ি। তবে দীর্ঘদিন ধরে মাসির বাড়িতেই আশ্রিত। সেই সুবাধেই সন্ধান মিলল তার। অসীম বর্তমানে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালক পদে চাকরি করেন।

অসীম জানান, সেদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা। আমি মাত্র খামারবাড়ি দিয়ে ইন্দিরা রোডের গলিতে ঢুকছি। গলিতে ঢোকার মাঝামাঝিতে সামনে দিয়ে একটা গাড়ি (ট্যাক্সিক্যাব হলুদ রঙয়ের) অ্যাটাক দেয়। যে লোকগুলো ছিল, সবগুলো একেকটা স্বাস্থ্যবান উঁচা-লম্বা। আমাকে গাড়ি থেকে কলার ধরে নামিয়ে নেয়। তখন আমি বলছি, স্যার আমারে মাইরেন না। আমি কিছু জানি না। তারপর তারা মারধর করে স্যারকে হাইস গাড়িতে উঠায় নিয়ে গেছে। আমার গাড়িটাও নিয়ে গেছে। আমারেও ফেলে দিয়েছে। পরের দিন সকাল বেলা কাওরান বাজারের ওয়াসা ভবনের উল্টাসাইডে গাড়িটি পাই।

চৌধুরী আলমের গাড়ির ড্রাইভার কীভাবে হলেন? এমন প্রশ্নে জবাবে অসীম বলেন, ‘আমিতো উনার ড্রাইভার না। আমি উনার সেকেন্ড ওয়াইফের বোনের বেতনভুক্ত ড্রাইভার ছিলাম।’

তবে অসীম হলফনামায় লিখেছেন, চৌধুরী আলমের বেতনভুক্ত ড্রাইভার। কিন্তু অসীম তা অস্বীকার করেন। পরে অনুসন্ধানী টিম তাকে স্বাক্ষরযুক্ত হলফনামা দেখালে অসীম তার স্বাক্ষরের কথা স্বীকার করেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমিতো আদালতে যাই-ই নি।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তবে এতকিছুর পরও পুলিশ তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়। নষ্ট করে ফেলা হয় গাড়িতে থাকা অপহরণকারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ সব আলামত। অপহরণের ছয়দিনের মাথায় মামলা দায়ের করেন চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী। একের পর এক তদন্ত সংস্থা বদলালেও রহস্য উদ্ঘাটনের নাটকীয় ভূমিকায় দেখা গেছে সবগুলো সংস্থাকেই।

চৌধুরী আলম অপহরণ মামলার চারটি তদন্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের ভাষা একইরকম। অর্থাৎ চৌধুরী আলমের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেটি বের করতে পারেননি তারা। তবে সিআইডি কর্মকর্তা শাহানুর বারির তদন্তে একটু সূত্র পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গুমের পাঁচদিন আগে রাজধানীর গুলশানের ৭২ নম্বর রোডে ১৫-১৬ জন লোক চৌধুরী আলমকে অপহরণের চেষ্টা করে। জনতা তখন বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে হাতে-নাতে আটক করে। যিনি নিজেকে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্য বলে পরিচয় দেন। উপস্থিত জনতা তাকে গুলশান থানায় সোপর্দ করলে থানার তৎকালীন এসআই মোহাম্মদ আলী জিডি গ্রহণ করে তাকে র‌্যাবের জিম্মায় ছেড়ে দেন। সিআইডির সেই তদন্ত কর্মকর্তা শাহানুর বারি বর্তমানে এসপিবিএনে কর্মরত।

শাহানুর বারি বলেন, ‘পুলিশ যদি মনে করে আমরা এটা খুঁজে বের করবো তাহলে পারে। আর যদি মনে করে করবো না! চাপবোধ আমার কাছে হয়নি। চাপবোধ যদি হয়, সেটি তাহলে সিআইডি চিফের কাছে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকলে এটা সমাধান হতো।’

কেন তথ্য বের করতে পারেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে বারি বলেন, ‘আমি না হয়-তথ্য বের করতে পারিনি, আগের আইওতো করেনি। এখন যিনি তদন্ত করছেন, তিনি যদি মনে করেন আগেরটা (তদন্ত) যা করছে ঠিক করেনি, তাহলে নতুন করে করতে পারে।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, চৌধুরী আলমের গুম রহস্যের জট খুলতে হলে এএসআই পরিচয়ধারী বিল্লাল হোসেনকে দরকার। গুলশান থানা পুলিশ যার সম্পর্কে জিডিতে আইডি এবং পার্সোনাল নাম্বার ছাড়া তেমন কিছুই উল্লেখ করেনি। গুলশান থানার তৎকালীন ওসি কামাল উদ্দিন এবং জিডি গ্রহণকারী এসআই মোহাম্মদ আলী এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

মোহাম্মদ আলী বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত। তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ চেয়ে সার্চলাইট অনুসন্ধানী টিমের পক্ষ থেকে আইজিপি বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনটি গ্রহণ করা হলেও সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়নি।

টিম সার্চ লাইটের অনুসন্ধান বলছে, বিল্লাল হোসেনকে পুলিশের এএসআই হিসেবে জিডিতে উল্লেখ করা হয়। তিনি কাজ করতেন র‌্যাবের ইন্টিলেজেন্স উইংয়ে।

বিল্লাল যদি সেনা সদস্যই হন তাহলে জিডিতে তাকে এএসআই কেন বলা হলো? এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নুর খান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থারা এই কাজগুলোর সঙ্গে যখন যুক্ত হয়, তখন তারা অনেক গোপনীয়তা অবলম্বন করেন। এবং ভিকটিমের অনেক ক্ষেত্রে যে টিম তাকে অপহরণ করে, উঠিয়ে নিচ্ছে সে টিমের নেতা বাদে অন্যান্য সদস্যরা কিন্তু কাকে তারা উঠিয়ে নিচ্ছে সেটা জানেও না। তার নাম পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে কোড নেইম ইউজ করা হয়। তারপর এক টিম যখন উঠিয়ে নেয়, এটা হস্তান্তর হয় আরেক টিমের হাতে এবং তারা আবার আরেক টিমের হাতে হস্তান্তর করে। কখনো কখনো তাদের দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। কখনো কখনো তাদের দেশে হত্যা করা হয়। কখনো কখনো তাদের বিভিন্ন জায়গায় গোপন বন্দীশালায় আটক রাখা হয়। আমরা দেখেছি, গত ৫ আগস্টের পর বেশকিছু মানুষ মুক্ত হয়েছেন। এখনি এটা বলার সময় আসেনি। ধারণা করি-হয়তো এদের অনেকেই আর নেই।’

চৌধুরী আলমের দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় বোন মমতাজ বেগম। তিনি আলমের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। মমতাজ বলেন, ‘মাগরিবের পরপর ফোন দেয় একটা সিটিসেল নম্বর থেকে।’

তিনি বলেন, ‘দীপক সাহাকে আমি চিনি। তিনি পিএম (প্রধানমন্ত্রী) দপ্তরে চাকরি করতেন। দীপক বলেন, ৫০ লাখ টাকা দেবেন। চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলায় দেব। দেয়ার পর ১৯ দিনের মাথায় চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের কথা বলিয়ে দেয়া হয়।’

কে এই দীপক সাহা? যিনি চৌধুরী আলমকে ফিরিয়ে দিতে বা দেখা করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন? মমতাজ বলেন, ‘৩৫ লাখ টাকা দিলাম। দেয়ার পর প্রোগ্রাম করলো আমাকে জকিগঞ্জ বর্ডারে দেবে। আরো টাকা দিতে হবে ফেরত দেয়ার পর। বলে, এখানে দেয়ার সুযোগ নেই। আপনি ইন্ডিয়া যান।’

আপনার কাছে কি মনে হয়েছে যে চৌধুরী সাহেবকে নিয়ে গেছে? উত্তরে মমতাজ বলেন, ‘হ্যাঁ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, মমতাজ একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন। এমনকি স্বচক্ষে দেখেছেনও। নিশ্চয়ই ভুল হওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, দীপক সাহা গুমের শিকার চৌধুরী আলমের সন্ধান জানলেন কী করে?

মমতাজ বলেন, ‘১৫-২০ দিন পর আমি পিএম দপ্তরে গেছি। লিকু-লিটু আছে না? তার কাছে গেছি। জিজ্ঞাস করেছি, দীপক সাহা কোথায় বসে? যাওয়ার পর বলে, তোর সাহসতো কম না? তুই এইখানে আমার কাছে আইছোস? একটা আওয়াজ করবি তোকেসহ গুম করে ফেলব।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, দীপক সাহা নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব পরিচয় দিয়েছিলেন। তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন একজন ফটো সাংবাদিক। কর্মজীবনের শুরু সন্দ্বীপ পত্রিকার মাধ্যমে। পটপরিবর্তনের পর তিনি মারা গেছেন-সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন খবর জানা গেছে।

ফেসবুকে প্রচারিত দীপক সাহার ছবি দেখানো হয় চৌধুরী আলমের দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাই মাহবুব আলমকে। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি শতভাগ শিওর ইনিই দীপক সাহা। তার সাথে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে। কারণ সে আমার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে করে করে টাকা নিয়েছে।’

মাহবুব আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পর সেপ্টেম্বরে পোস্টটা (ফেসবুক) দিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে-এই যে অপকর্ম করেছে এটা ঢাকার জন্য নাটক সাজিয়েছে- সে মারা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ যুগে গুমের ঘটনায় আন্তঃদেশীয় যোগসাজশে যে সূত্র কাজ করতো, চৌধুরী আলমের ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছে। বাংলাদেশে গুম নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্যেও এ ধরনের অভিযোগ বারবার এসেছে।  

এ বিষয়ে ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ‘ইন্ডিয়ান র বা ইন্ডিয়ান ইন্টিলিজেন্স বাহিনী আমাদের এই গুম হয়ে যাওয়ার মেকানিজমের পেছনে কাজ করেছে। এটা অনেক কেসের ক্ষেত্রে আমারা পেয়েছি। গুজরাট ও কাশ্মীরে যেভাবে গুম হয়, আমাদের দেশের গুমের মেকানিজম কিন্তু সেভাবেই ছিল। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এই কালচার ছিল না। শুরুটা ওখান থেকে হলো যে, মানে শহীদুল আলম ভাই থেকে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, চৌধুরী আলমের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে? তা নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এই বাস্তবতা স্বজনদের কাছে বজ্রপাতের মতোই। বোবা কান্নায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন চৌধুরী আলমের প্রথম স্ত্রী হাসিনা চৌধুরী।

হাসিনা চৌধুরী বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে কান্না করি। আল্লাহ আমি চোখে না দেখি, একটু কানে শুনবো আমার স্বামীরে কারা কী করছে।’

আছে কি বিচারের মানুষ? প্রশ্ন রাখেন তিনি। হাসিনা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলেরা ছোট। এতিম হয়ে গেছে। জানি না এতিম হয়েছে কিনা।’

চৌধুরী আলমের বড় ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী। বাবাকে উদ্ধার করতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছিলেন। পনের বছরেও ঘুচেনি অপেক্ষা। তিনি বলেন, ‘একটা গাড়ি আসলো, এসে লাগিয়ে দিলো এতো সহজ না বিষয়টা! ড্রাইভার তর্কাতর্কি করলো-এগুলো পুরো প্যাকেজ নাটক।’

আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে কোনো কো-অপারেশন পাইনি। একটা সংস্থার তো মিনিমাম দায়িত্ব থাকে। চৌধুরী আলম নিখোঁজ, এটা একটা খবর।’  

তিনি বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে একটা বড় কর্মসূচি দেয়ার দরকার ছিল। আরও অনেক কিছু করতে পারত ওই সময়। যেটা করলে পরবর্তীতে সরকার ভয় পেত। বা গুমের ঘটনা এতো সাহস নিয়ে ঘটাত না।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবার অবর্তমানে তার অনুসারীদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অসহযোগিতা পেয়েছে আবু সাঈদ। অভিযোগ তার বাবার ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেককিছু লুটে নিয়েছেন তারা।

আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘বাবার অনুপস্থিতে বেশ কয়েকজন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সবাই এসটাবলিশ হয়ে গেছেন লাইফটাইম।’

সবশেষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছেন আবু সাঈদ। ১৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেয়া সেই অভিযোগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগ এবং এমনকি বিএনপি নেতাদেরও নাম এসেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কতদূর এগোলো সে বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন,‘ প্রত্যেকটা জায়গা থেকে অসহযোগিতা আছে। দৃশ্যত তারা বলেন, আমরা রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু প্রাকটিক্যালি সেই সহযোগিতা আমরা পাইনি। আমরা যেমন পাইনি, গুম কমিশনও সেটা পাইনি বা পাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘জোর করে নানাভাবে এটাকে আমরা অ্যাভেইল করার চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে এই তদন্তের ব্যাপারে আমরা যাকেই সম্পৃক্ত মনে করবো বা নেসেসারি মনে করবো তাদের প্রত্যেককে কোয়েশ্চনিং করা হবে।’

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

নবীজীর সাহাবীদের নিয়ে কটূক্তি/ মৌলভীবাজারে নারী আইনজীবী আটক

১০

গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি অসত্য/ বাংলাদেশি কূটনীতিকের তেহরানের বাসা অক্ষত!

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status