ইরান-ইসরাইল সংঘাতে নিহত হননি খামেনির শীর্ষ উপদেষ্টা শামখানি, রাষ্ট্রীয় টিভিতে দিলেন সাক্ষাৎকার

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবার পরও  আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে এই সংঘাত। এবার সে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা ইরানের শীর্ষ উপদেষ্টা আলি শামখানির টেলিভিশনের পর্দায় উপস্থিত হওয়া। নিহত সামরিক ও আইআরজিসি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় জানাজায় যোগ দেন তিনি । প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে শামখানি ইসরাইলি  বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন, কিন্তু ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে শামখানির পক্ষ থেকে  খামেনির কাছে লেখা একটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তিনি জীবিত বলে জানিয়েছেন।  শীর্ষ উপদেষ্টা ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে তিনি প্রকাশ করেছেন যে তিন ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকার পরেও তিনি কীভাবে এই আক্রমণ থেকে বেঁচে যান । শামখানি বলেন যে গত ১৩ জুন যখন ভবনটি তার উপর ধসে পড়েছিল তখন তিনি ভেবেছিলেন এটি বোধহয়  ভূমিকম্প। ইরানি মিডিয়াকে শীর্ষ উপদেষ্টা  বলেছেন - "সে দিন যখন ইসরাইলের হামলা শুরু হয়, তখন আমি সবে ঘুম থেকে উঠেছি। প্রার্থনা করার সময় হয়ে গিয়েছিল। বাসার সবাই তখন ঘুমোচ্ছিল। আচমকাই আমার গোটা বাড়ি ভেঙে পড়ে।’’ 

শামখানি জানান, কিছু ক্ষণের জন্য তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তবে যখন জ্ঞান ফিরে আসে, তখন দেখেন ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন। তিন ঘণ্টা ওই অবস্থায় পড়েছিলেন। শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। শামখানি বলেন, ‘‘ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে বার হওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। অনেক ক্ষণ পর উদ্ধারকারী দলকে দেখতে পাই। তখন তাদের উদ্দেশে বলেছিলাম ‘আমি এখানে আছি!’ আমার চিৎকার শুনে উদ্ধারকারী দল এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’’ এর আগে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, শামখানি নিহত হননি, বরং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর কোনো ছবি বা ভিডিও প্রকাশ না পাওয়ায় এ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় টিভি ও সংবাদমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি এবং সরাসরি সাক্ষাৎকারে অবসান ঘটল সব জল্পনার। আশেপাশের বাসিন্দারা বিস্ফোরণের তীব্রতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর শামখানির বেঁচে যাওয়াকে অনেকেই অলৌকিক বলে অভিহিত করেছেন।

শামখানির বাসভবনের ঠিক বিপরীতে বসবাসকারী তেহরানের এক বাসিন্দা মিডল ইস্ট আইকে বলেছেন যে এটি একটি "অলৌকিক ঘটনা" যে তিনি বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে গেছেন। কারণ বিস্ফোরণের জেরে তিনি এবং তার স্বামী  বিছানা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন।শামখানি পূর্বে ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইরানি সামরিক বাহিনীর সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন এবং একসময় তাকে প্রেসিডেন্ট  পদপ্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হত। অন্যদিকে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর  ইরানের  সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি আর কোনও জনসমক্ষে উপস্থিত হননি, কেবল তিনটি রেকর্ড করা ভিডিও বার্তায় তাঁকে দেখা গেছে।

সূত্র : দ্য উইক