অনলাইন
গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি অসত্য
বাংলাদেশি কূটনীতিকের তেহরানের বাসা অক্ষত!
কূটনৈতিক রিপোর্টার
(৪ ঘন্টা আগে) ২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:৩০ পূর্বাহ্ন

গুঁড়িয়ে দেয়া স্টেটমেন্ট একটা মিস কমিউনিকেশন ছিলো- বাংলাদেশি কূটনীতিক ওয়ালিদ ইসলাম
নিজের তেহরানের বাসা ‘গুঁড়িয়ে দিয়েছে’- মর্মে বিবিসিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে চাঞ্চল্য তৈরি করা বাংলাদেশি কূটনীতিক ওয়ালিদ ইসলামকে নিয়ে বিব্রত ঢাকা। যেকোনো পরিস্থিতির গভীরতা অনুধাবন না করে আগেও নানা ইস্যুতে পেশাদার ওই কূটনীতিক মনগড়া ‘সেনসেশন’ তৈরির অপচেষ্টা করেছেন বলে দাবি সেগুনবাগিচার। একাধিক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, তার আচরণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা সরকারের দায়িত্বশীলরা বিরক্ত। জুনিয়র লেভেলে বিভিন্ন ঘটনায় তাকে বহুবার বুঝিয়ে বলা হয়েছে, ক্ষণে ক্ষণে সতর্কও করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তা খুব একটা আমলে নিয়েছেন বলে মনে হয় না। পররাষ্ট্র ক্যাডারের ৩৫তম ব্যাচের ওই কর্মকর্তা তার রুটিন দায়িত্ব পালনের চেয়ে ‘অহেতুক প্রচারে’ বেশি মনোযোগী বলে অভিযোগ রয়েছে। তেহরানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ওয়ালিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করে গত ১৭ই জুন বিবিসি বাংলায় একটি রিপোর্ট হয়। যার শিরোনাম ছিল “আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে- বিবিসিকে বললেন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা।” ওই রিপোর্টে তেহরানের আবাসিক এলাকায় ইসরাইলি হামলার পর উদ্ধার তৎপরতার একটি ভীতিকর ছবি ক্যাপশনসহ যুক্ত করা হয়। সংবাদদাতা তারেকুজ্জামান শিমুলের রিপোর্টে মিস্টার ইসলামের দাবি কোনো তৃতীয় সোর্সে চেক না করেই বলা হয়- ইরানের রাজধানী তেহরানে সোমবার ইসরাইলের হামলায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের বাসভবনও আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একজন কর্মকর্তার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হামলার সময় ওই কর্মকর্তা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন! ওয়ালিদকে ‘ভুক্তভোগী’ উল্লেখ করে বিবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়- তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা মূলত জর্ডান নামের একটি এলাকায় বসবাস করেন, যেটি পড়েছে তেহরানের তিন নম্বর জেলায়। ওই এলাকায় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, যেগুলোতে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হামলার আগে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়। এতে প্রাণহানি কিছুটা কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। ইস্তাম্বুলে থাকা ওয়ালিদ কোনোরকম ভেরিফিকেশন ছাড়াই তেহরান পরিস্থিতির বর্ণনা দেন বিবিসিকে। বলেন- “আমাদের আশপাশে এখন আর কিছুই নাই। কেবল কূটনীতিকদের কয়েকটি বাড়ি টিকে আছে, কিন্তু আশপাশে কিছুই নাই।” কিন্তু না, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার মানবজমিনকে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, ওয়ালিদ ইসলামের বাড়িটি পুরোপুরি অক্ষত রয়েছে। তার বাড়িতে ইসরাইলি হামলা দূরে থাক, অন্যত্র আক্রমণ বা হামলার কোনো আঁচড়ও তার বাড়িতে লাগেনি। ইসরাইলি হামলা নিখুঁত পরিকল্পনায় পারিচালিত হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ওয়ালিদ যেভাবে বিবিসিকে বলেছেন তাতে মনে হয়েছে তার বাড়িকে টার্গেট করেই হামলা করেছে ইসরাইল। অথচ তার বাড়ির কাছাকাছি কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তবে হ্যাঁ, তার বাসভবন যে বৃহৎ এলাকায় সেখানকার কিছু বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, যা ওই বাসভবন থেকে অনেক দূরে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, তেহরানের বাংলাদেশ মিশন এবং সেই কূটনীতিকের বাড়ি সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছে। এ নিয়ে ঢাকায় পাঠানো তেহরান মিশনের সর্বশেষ রিপোর্টটিও উদ্ধৃত করেন সেগুনবাগিচার ওই কর্মকর্তা। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ালিদ যখন এই স্টেটমেন্ট দেন তখন তার অবস্থান ছিল তুরস্কে। ছুটি শেষে ঢাকা থেকে তিনি তেহরান ফেরার জন্য ইস্তাম্বুলে অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ অবস্থায় নিজের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার ‘খবর’ তিনি কিভাবে পেলেন? আর সেই ‘খবর’ রাষ্ট্রদূত বা ঢাকাকে শেয়ার না করে বিবিসি’র মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ায় শুরু থেকেই তার ‘ইন্টেনশন’ নিয়ে প্রশ্ন বা সন্দেহ ছিল।
সম্প্রতি ফেসবুকে যা লিখেন ওয়ালিদ: এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে নিজের মতো করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গেছেন ওয়ালিদ ইসলাম। ঢাকায় থাকা অবস্থায় তার একটি স্ট্যাটাস ছিল এমন- “আমি দূতাবাসের কন্স্যুলার অফিসার। আল্লাহ না করুক যদি ইরান-ইজরাইলের অবস্থা আরও বাজে হয় আমার বাংলাদেশী কেউ দেশে ফিরতে পারবে না আমার অনুপস্থিতিতে। টেনশনে বাঁচতেছি না, ঘোড়ারডিম। আফগানিস্তান দিয়ে রওয়ানা করবো কিনা তাও বুঝতে পারতেছি না। কারণ, আমার নিজের জন্যই আফগানিস্তানের সব জায়গা সেইফ কিনা আমি জানি না। এদিকে ইরানি বন্ধুরা সবাই না যাওয়ার জন্য ফোন দিচ্ছে বারবার। আইছিলাম একটু আনন্দে কাটামু ছুটিডা। আয়া যে ব্যাক্কল হইছি তা খালি আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে। এদিকে বাংলাদেশী রোগীগো দুন্ন্যার ঝামেলা পোহায়তে হইতেছে। এই সমস্যা সমাধান করে সবার ট্রিটমেন্টের সুব্যবস্থাও করতে হবে। আমার সাথেই ক্যা বারবার এরকম হয়! অন্য স্ট্যাটাসে লিখেন- “দেখুন, দূতাবাস থেকে আমার সহকর্মী ফারুক ও তাহের সাহেবের নম্বর শেয়ার করেছিলো ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেরকে সহায়তা করতে। সাথে আমিও একটা পোস্টে আমার নম্বর ও ফারুকের নম্বর শেয়ার করেছিলাম। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ফারুক যে কলগুলো রিসিভ করছে তার ভেতর প্রেম প্রস্তাব, বিয়ের প্রস্তাব, ইরানের অবস্থা কি, কিভাবে যুদ্ধে যাবে এগুলো নিয়েই ফারুককে ৭৫% কল রিসিভ করতে হচ্ছে। আর, আমি আর তাহের সাহেব ৮০% কল রিসিভ করছি আমরা ভালো আছি কিনা সেটা জানার জন্য। দেশবাসীর হাতে-পায়ে ধরিরে, এই মুহূর্তে আমাদের সাথে এই মস্করাগুলো করবেন না, প্লিজ। আমাদেরকে বাঁচতে দিন, ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেরকে বাঁচাতে দিন। আজ আমাদের দূতাবাস এরিয়াতে হামলা হবে। আমরা ওখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদেরকে ৩০ মিনিটের ভেতর সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু, আপনারা প্লিজ একটু মানবিক হোন। এই অসময়ে এরকম করলে মনের ভেতর খুঁতখুঁতে ভাব নিয়ে অনেক কল রিসিভ করা হয় না বা হবে না। বিপদে আপনার-আমার স্বজনেরাই পড়বে। প্লিজ, সামান্য মানবতা দেখান আমাদের প্রতি। আপনারা বিনা কারণে কল না দেয়াটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মানবিকতা এখন।” ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার মুহুর্তে লিখেন- “ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। মা বলছেন, “বাজান, তুই চাকরিডা ছাইড়ে দে। চাকরি ছাড়লিওতো যোগ্যতাতো ছাড়তিছিসনে। কিছুতো কইরে খাতি পারবি। তবুও, তুই ইরান যাইসনেরে।” বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়া সংক্রান্ত অপতথ্য বিষয়ক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ছিল এমন “তেহরান পৌঁছানোর পর গতকাল আমি বাসায় গিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমার এ্যাপার্টমেন্ট ঠিক আছে। বাসার উপরের এ্যাপার্টমেন্টগুলো সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত। সুতরাং, এই গুঁড়িয়ে দেয়া স্টেটমেন্ট একটা মিস কমিউনিকেশন ছিলো। আমি তার জন্য সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”